ব্রিজ থেকে ফেলে চা-দোকানিকে হত্যার অভিযোগ: পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পায়নি পিবিআই

By নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া
9 December 2025, 10:25 AM

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পুলিশের বিরুদ্ধে চা–দোকানি রফিকুল ইসলাম দুদুকে মারধর ও ব্রিজ থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্ত শেষে সংস্থাটি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রফিকুলের মৃত্যু ছিল দুর্ঘটনাজনিত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) গোকুল চন্দ্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তদন্তে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। রফিকুল ইসলাম দুদুর মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত কারণে হয়েছে বলে উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, মৃত্যুতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের কোনো ভূমিকা না পাওয়ায় তাদের এই মামলার সাক্ষী করা হয়েছে।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চণ্ডিপুরে অভিযানে গিয়েছিলেন ভেড়ামারা থানার পাঁচ পুলিশ সদস্য। সেখানে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের ৪ নম্বর ব্রিজের ওপর চা–দোকানি রফিকুল ইসলাম দুদুকে ডেকে নেন পুলিশ সদস্যরা।

সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ ছিল, পুলিশ সদস্যরা রফিকুলকে মারধর করলে শুরু হয় ধ্বস্তাধস্তি। একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্যরা ধাক্কা দিয়ে রফিকুলকে ব্রিজ থেকে ক্যানালে ফেলে দেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরে তিন পুলিশ সদস্যকে এলাকাবাসী পাশেই আরেকটি দোকানে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

ঘটনা তদন্তে তৎকালীন পুলিশ সুপার একটি কমিটিও গঠন করেছিলেন।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি তীব্র সংকটে পড়েছে। রফিকুলের মৃত্যুর পর তার ছোট ছেলে কিছুদিন চায়ের দোকানটি চালালেও স্থানীয়দের বাধার মুখে তা এখন বন্ধ। মাসখানেক আগে একটি মারামারিকে কেন্দ্র করে বড় ছেলেও কর্মস্থলে যেতে পারছেন না।

রফিকুলের বড় ছেলে সৈকত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট ভাই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। দুশ্চিন্তায় তার পরীক্ষা ভালো হয়নি, এক বিষয়ে ফেল করায় তার লেখাপড়া বন্ধের পথে। বাবা না থাকায় আমরা অথৈ সাগরে পড়েছি।'

স্বামীর মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি জানেন না রফিকুলের স্ত্রী। তিনি এখনো অভিযোগপত্র (চার্জশিট) ও বিচারের আশায় আছেন। তিনি বলেন, 'পিবিআই তদন্ত করছে। আগে আমাদের কাছে কয়েকবার এসেছিল, এখন কম আসে।'

হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, 'যেখানে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি, সেখানে মামলা চালাব কী দিয়ে? দেশের আইনে যা হয়, তাই হবে।'