সেই উপ-উপাচার্য থাকায় বিজয় দিবসের সভা বর্জন চাকসু ও হল সংসদ নেতাদের
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানের উপস্থিতির কারণে বিজয় দিবসের সভা বর্জন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এজিএসসহ হল সংসদের ৯ জন প্রতিনিধি।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় এই ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে সেখানে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল।
অনুষ্ঠান চলাকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের (জেসিডি) নেতাকর্মীরা 'ভুয়া', 'ভুয়া' বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে চাকসু এজিএস আয়ুবুর রহমান তৌফিকসহ হল সংসদের প্রতিনিধি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি বর্জন করে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
অনুষ্ঠান বর্জন করা হল সংসদের বাকি ৮ জন হলেন—মাস্টারদা সূর্যসেন হল সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) মো. তাজিম, সাধারণ সম্পাদক মো. সাদমান, এ.এফ.রহমান হল সংসদের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক তানজিম আশরাফ, শাহজালাল হল সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ জাবেদ, সমাজেসবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, আলাওল হল সংসদের জিএস মো. নূরনবী, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক বনি আল আমিন সরকার এবং অতীশ দীপঙ্কর হল সংসদের ভিপি রিপুল চাকমা।
হোস্টেল সংসদের একজনও অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। তিনি হলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের স্বাস্থ্য, আবাসন ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক জামিল হোসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা জানান, অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানের অবস্থান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। তার উপস্থিতিতে বিজয় দিবস উদযাপনের কোনো কর্মসূচিতে থাকা উচিত না। এ কারণেই তারা আলোচনা সভা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম সীমান্ত বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে অসত্য তথ্য ছড়িয়েছেন। এজন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং পদত্যাগ করতে হবে।
সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল সিদ্দিকীও একই দাবি জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে ক্যাম্পাস অচল করে দেওয়া হবে।
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ৫৪তম শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, 'যে সময় আমি (পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি; সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।'
এই বক্তব্যের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
পরে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে 'সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য' ব্যানারে শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে দুজন উপ-উপাচার্য প্রায় আট ঘণ্টা ভবনের ভেতরে অবরুদ্ধ থাকেন।
বিজয় দিবসের কর্মসূচির কথা বিবেচনায় নিয়ে পরে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেন।