গারোদের নবান্ন উৎসব ‘ওয়ানগালা’
নাচ-গানসহ রঙিন উৎসবের আমেজে মুখর হয়ে উঠেছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া গারো লাইন মাঠ। দুদিনব্যাপী গারো সম্প্রদায় উদ্যাপন করেছে ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব 'ওয়ানগালা'। নতুন ফসলের জন্য কৃতজ্ঞতা, দেবতাদের প্রতি ভক্তি জানানো ও ফসল নৈবেদ্যের মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হয় গতকাল রবিবার রাতে।
দুদিনের এই উৎসবে ছিল হারমোনিয়াম, গিটার ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সুর। গারো ভাষার গান, নৃত্য ও সুরের সঙ্গে নতুন ফসল উৎসর্গের রীতি যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। পরিবার-পরিজনসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষজন আসে এই উৎসব উপভোগ করতে।
উৎসবের ভোর থেকেই মানুষ রঙিন পোশাক পরে গারো জনগোষ্ঠীর লোকজন মাঠে আসতে শুরু করে। গায়করা গারো ভাষায় লেখা ওয়ানগালা গান পরিবেশন করে। এই গানের তালে গ্রামবাসীরা তাদের নতুন ফসল স্রষ্টার উদ্দেশ্যে ফসল উৎসর্গ করে, যা উৎসবের একটি রীতি।
শ্রীচুক গারো নকমা অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গারো খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা এতে অংশ নেন। প্রার্থনা শেষে শুরু হয় ফসল উৎসর্গের মূল আয়োজন। গারো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজেদের নাচ-গান আর নতুন ফসল ঘরে তোলার বিভিন্ন অনুষঙ্গ নৃত্যগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
শ্রীমঙ্গলের ইউএনও ইসলাম উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন শ্রীচুক গারো নকমা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অনুপ চিসিম। সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল যোসেফ হাজংয়ের সঞ্চালনায় বকতব্য দেন ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার শ্যামল জেমস গমেজ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী, মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপপরিচালক প্রভাস সিংহ প্রমুখ।
অনুপ চিসিম বলেন, 'মিসি সালজং' বা শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতি চেয়ে এ উৎসব পালন করা হয়।
সামুয়েল যোসেফ হাজং জানান, সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে গারোদের নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকে। 'ওয়ান' শব্দের অর্থ দেব-দেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী এবং 'গালা' শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা।
শেরপুর জেলা থেকে আসা বিলন রুগা বলেন, আমি প্রথম এসেছি ওয়ানগালায়। মন ভরে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিষ দিও বলেন, নতুন ফসল প্রভুকে উৎসর্গ করার জন্যই এই উৎসব পালন করি আমরা। এটা আমাদের নবান্ন উৎসব। আমরা সারাদিন নেচে-গেয়ে কাটাই। আর প্রার্থনা করি যেন পরের বছর এ বছরের চেয়ে ভালো ফলন পাই।
পার্থ চাম্বুগং বলেন, নতুন ফসল হওয়ার পর আমরা প্রভুকে আগে ফসল উৎসর্গ করে থাকি। তারপর আমরা খাই। নতুন ফসল উৎসর্গ করার মাধ্যমে খৃষ্ট রাজাকে সম্মান করা হয়। এ উৎসবে অনেক বন্ধু-বান্ধব একসঙ্গে হতে পারে। বাড়িতে বাড়িতে অতিথিরা আসে।