‘আইসা এত ভিড় কইরা আমাদের দেখার কিছু নাই’

শাহীন মোল্লা
শাহীন মোল্লা
28 November 2025, 17:50 PM
UPDATED 28 November 2025, 23:59 PM

পোড়া ঘর, কালো হয়ে যাওয়া টিন, পাশেই পোড়া আসবাবপত্রের স্তূপ। কষ্টে উপার্জিত আয়ে গড়া সংসারের সবটাই পুড়ে ছাই—কড়াইল বস্তিতে পুড়ে যাওয়া এমন একটি ঘরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী মর্জিনা আক্তার (৩৩)। 

আজ শুক্রবার বিকেলে তিনি এসেছেন কড়াইল বস্তিতে। কাছেই মহাখালীর সাততলা বস্তিতে থাকেন। সেখানেও আগুনে পুড়ে অনেককে সর্বস্বান্ত হতে দেখেছেন তিনি। কড়াইল বস্তিতেও যেন ঠিক একই দৃশ্য দেখছেন। 

গত মঙ্গলবার বিকেলে কড়াইল বস্তিতে আগুন লেগে অন্তত ১৫০০ ঘর পুড়ে যায়। এরপর থেকে অসহায় অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন।  

কড়াইলে আসা মর্জিনা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু খোঁজ-খবরই নিতে পারমু, মন চাইলেও কিছু দিতে পারমু না।'

জামাল হোসেন (৩৫) নামে আরেকজন এসেছেন মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে। তিনি বলেন, 'টিভিতে দেখলাম আগুনের ছবি। তাই দেখতে আসলাম মানুষগুলো কী অবস্থায় আছে।' 

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় কড়াইল বস্তিতে আজ সকাল থেকেই মানুষের ভিড় ছিল। বিকেল হতে হতে বস্তির অলি-গলি লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, দেখতে আসা মানুষের মধ্যে আশপাশের বিভিন্ন বস্তির মানুষই বেশি। অধিকাংশই শ্রমিক শ্রেণি বা নিম্নবিত্তের। 

তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বস্তিতে যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে।

চারদিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা পাননি সর্বস্ব হারানো কড়াইল বস্তির বাসিন্দা খলিলুর রহমান (৩৫)। চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে পোড়া বাড়ির স্থানেই পলিথিন টাঙিয়ে বসে ছিলেন। 

'দিনমজুরের কাজ করি। এখন স্ত্রী ও সন্তানদের এভাবে একা রেখে কাজেও যেতে পারছি না। সবাই আসে আর দেখে চলে যায়। কেউ সাহায্য করে না। আমার দরকার টিন আর খুঁটি,' বলেন তিনি।

গত তিনদিন খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন খলিল। কিন্তু ঘর ছাড়া থাকবেন কীভাবে? 'আমাদের দরকার রাতে থাকার ব্যবস্থা, টয়লেট। আইসা আইসা এত ভিড় কইরা আমাদের দেখার কিছু নাই,' বলেন খলিলুর। 

আগুনে পুড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব বস্তির প্রায় সব মানুষের একই প্রশ্ন।

চারদিনে এ পর্যন্ত কড়াইল বস্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল-ডাল ও মশারি দেওয়া হয়েছে।