প্রিয়জনের সঙ্গে অফিসের বিষয়ে কতটুকু বলা যায়?
'জানো, আজ বস কী বলেছে?' কিংবা 'অমুক ভাই তো কোনো কারণ ছাড়াই ছুটি নেয়, আর আমার দরকার হলেও ছুটি পাই না।'—এমন নানান ক্ষোভমিশ্রিত বা কৌতূহলোদ্দীপক কথাবার্তা আমাদের পরিবার, প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু, সবার কাছেই হয়তো শুনে এসেছি। কেননা অফিসের রাগটা অফিসে না ঝেড়ে বেশিরভাগ সময় মানুষ জমিয়ে রাখে, অফিসের পরের সময়টার জন্যই।
মানুষের ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবন আলাদা—এ কথাটি আমরা প্রায়ই বলে থাকি। কিন্তু সত্যি বলতে, এই দুটোকে আলাদা করতে বলা যত সহজ, করা ততটা নয়। তাই তো সারাদিন অফিসে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেই আমরা সুইচ অফ করে দিতে পারি না নামে ৮ ঘণ্টা আর কাজে ১০-১২ ঘণ্টার কর্মব্যস্ততাকে। দিনভর কাজের ফলে আসা ক্লান্তি, সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো-মন্দ সময়, বসের ঝাড়ি, চাপিয়ে দেওয়া কাজ—এই সবকিছু নিয়েই আবার কথার ঝুড়ি খোলে প্রিয়জনের কাছে গিয়ে।
কিন্তু অফিসের কথা কি সঙ্গীর সঙ্গে বলা উচিত? কিংবা যদি বলা হয়ও, কতটা সীমারেখা বজায় রাখা দরকার? এমন সব প্রশ্ন মাথায় ঘোরাটাও আবার অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ঢুঁ মারা যাক আজকের লেখায়।
স্বাস্থ্যকর আলাপ করা যায়
প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে আমরা নিজেকে অনেকটা পরিমিতভাবে, বুঝেশুনে চালিয়ে নিয়ে যাই। কখনো কখনো অফিস শেষে বা বিরতির সময়ে নিজের কাছের মানুষের কাছে একটু আধটু অভিযোগ করতে ভালোই লাগে। শুধু অভিযোগ নয়, নিজের কাজের উন্নতি-অবনতি, ক্যারিয়ারের অর্জন, চাহিদা ইত্যাদি সব কিছু নিয়েই সঙ্গীর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর আলাপ করা দরকার। কেননা এতে করে আপনার দিনের বেশিরভাগ সময় যে কাজে যায়, সে কাজের সঙ্গেও আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষটির একটি সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এর ফলে, আপনার কাজ সংক্রান্ত ভালো লাগা, মন্দ লাগা, বিরক্তি-আনন্দ সবই তার কাছে পরিচিত থাকবে। যার ফলে দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা আরও জোরদার হবে।
২০২২ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, সঙ্গীর সঙ্গে নিজের কর্মজীবন নিয়ে কথা বললে সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। যখন দুজনে মিলে দিনভর পরিশ্রমের পর অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে কী কী হয়েছে—এই তালিকা খুলে বসবেন, তখন অনেক ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে নিজের অবস্থাটাও হয়তো মেলাতে পারবেন। এর ফলে সহমর্মিতা, সমমর্যাদার মতো বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে তৈরি হবে।
তিক্ততা যেন না আসে
কথায় আছে, লেবু বেশি কচলালে তেতো হয়ে যায়। ঠিক তেমনি একই বিষয়ে বারংবার কথা বলে গেলে মূলত নেতিবাচক স্বরে বা অভিযোগের কণ্ঠে বলা এই কথাগুলোও একটি নির্দিষ্ট সময় পর তিক্ততার জন্ম দেয়। তাই একই বিষয়ে যাতে অতিরিক্ত কথা বলে সঙ্গীকে বিরক্ত না করে তোলেন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এমন অনেককেই দেখা যায়, প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর প্রতিদিনের অফিসের কথা শুনতে শুনতে নিজেও সেটি নিয়ে মানসিকভাবে অস্থির অনুভব করেন। বারংবার একটি বিষয়ে অভিযোগ করার ফলে মনে হতে পারে, যিনি একটানা অনুযোগ করে যাচ্ছেন, দোষ হয়তো তারই। এমন অনেক হিতে বিপরীত ঘটনাই ঘটতে পারে, তাই সবসময় খেয়াল রাখতে হবে—মন হালকা করার আলাপ-আলোচনাও যাতে মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। কেননা একজনের মন হালকা করার জন্য অন্যের মন বা দিন খারাপ করাটা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।
যদি কেউ না চায়
তবে সম্পর্কের সব নিয়ম-নীতিই অকেজো হয়ে যায়, যখন কেউ একজন সেটি চায় না। যদি এমনটা হয় যে আপনার সঙ্গী বা আপনার মানসিক চাহিদা হচ্ছে কাজ ও ব্যক্তিজীবনকে একেবারেই আলাদা রাখা, সেক্ষেত্রে অবশ্যই দুজনের পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে সেভাবেই এগোতে হবে। আদতে কাজের চাপ অনেকসময় মানুষকে এতটাই বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে যে, যার ফলে কেউ হয়তো চাইতেই পারে—একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সে আর কাজ নিয়ে কোনো ধরনের কথাই বলবে না।
এটি এক ধরনের 'এস্কেপিজম', যার ফলে ব্যক্তি নিজেকে মানসিক চাপ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এক্ষেত্রে তার নিজস্ব সীমারেখা মেনে চলাটাই একজন দায়িত্বশীল সঙ্গীর কাজ। তবে যদি একে অপরের সঙ্গে কাজের কথা ভাগ করে না নেওয়ার ফলে অন্যজন ভোগান্তিতে পড়ে, তবে সেটি একটু জটিল হওয়ার সম্ভাবনা তো আছেই। সে সম্ভাবনা এড়ানোর জন্যও রয়েছে আদি ও অকৃত্রিম সেই একটিই সমাধান, যোগাযোগ! ভবিষ্যতের ভোগান্তি এড়াতে, চাইলেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সীমানা ও চাহিদাগুলো ঠিক করে নিতে পারেন।



