সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমে জড়ানো কি উচিত
বিশ্ববিখ্যাত 'দ্য অফিস' সিরিজের জিম ও প্যাম হোক বা অন্য কেউ, অফিসের কিউবিকল থেকে কিউবিকলে কিংবা চা-কফির কর্নারে, সিটকম সিরিজ বা সিনেমার মতোই প্রেমও ঘোরাফেরা করে। তবে তা বেশিরভাগ সময় লুকিয়ে-চুরিয়ে। এ গোপনীয়তার বেশিরভাগ কারণই জন্ম নেয় সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার অভাব থেকে। সহকর্মীরা বাঁকা চোখে দেখবে, আড়ালে কানাঘুষা করবে অথবা বসের কাছে চক্ষুশূল হওয়ার মতো আরও হাজারটা অলিখিত নিয়মের ফলে একই প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী হলে প্রেমজাতীয় বিষয়-আশয় গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়। যদিও পরে সে প্রেম আবার বিবাহবন্ধনে রূপ নিলে খুব সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়। এর পেছনেও বিয়ের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, এর স্বীকৃতি ভূমিকা পালন করে। যা একই পরিসরে, প্রেমের ক্ষেত্রে উল্টো চরিত্র দেখায়।
যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬ হাজার কর্মজীবীর একটি জরিপ থেকে জানা যায়, প্রতি তিনজনে দুজন ব্যক্তিই সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমে জড়ানোর পক্ষে। আর বাকি একজন স্বপ্নেও এমনটা ভাবতে পারেন না। মোদ্দাকথাটা হচ্ছে, চিন্তা-ভাবনার ফারাক নিজেদের বেড়ে ওঠার পার্থক্য, খাওয়া-দাওয়ার পছন্দ আলাদা হওয়ার মতোই। কিন্তু এই পছন্দে কিছুটা ভূমিকা রাখে সামাজিক রীতিনীতি, সমাজের অলিখিত কিন্তু সর্বজনীন কিছু চাহিদার ছাঁচ।
ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের দুই পাল্লা সামলাতে গিয়ে জীবনে ভারসাম্যহীনতা চলে আসার ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটছে। আর এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হিসেবে জীবনে রোমাঞ্চের পাশাপাশি বেশ কিছুটা বিপদে পড়ার আশঙ্কা নিয়ে আসে 'সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম'।
'মনের জানালা খুলে উঁকি দিয়ে গেছে'
কর্মব্যস্ততার এই গতিময় আলাপনে আমাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে কর্মক্ষেত্রে। আর তাই যতই ব্যক্তিগত বিষয়াদি অফিসের চার দেয়ালের বাইরে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন, অনেকসময় তা সম্ভব হয় না। অফিসের ডেস্কে পাশাপাশি বসে কাজের আলাপে দুপুরের খাবারের সময় কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সময়টাতে কখন যে কার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তা বলা মুশকিল।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে যেমন আছে ছোটবেলার মতো লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করার আনন্দ, তেমনি আছে অন্য সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতনের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়। সব অফিসে লিখিতভাবে সহকর্মীদের রোমান্টিক সম্পর্ককে বাতিল ঘোষণা না করলেও আমাদের সংস্কৃতিতে বিষয়টিকে একটু অন্য চোখেই দেখা হয় বলে তা লুকানোর প্রবণতাই বেশি।
সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমে জড়ানো আদৌ উচিত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বহুধাবিভক্ত মতের দেখা পাওয়া যায়, তাতে সন্দেহ নেই। কারো কাছে কাজ ও প্রেম, দুটোকে একসঙ্গে দেখাটা একেবারেই অসম্ভব। তাই তারা সচেতনভাবেই বিষয়টি থেকে দূরে থাকেন। অন্যদিকে বাকিরা হয়তো বিষয়টি নিয়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেননি, চলছেন জীবনের স্বাভাবিক গতিতে।
ঔচিত্যবোধ বিষয়টি ব্যক্তিভেদে এতটাই বেশি আলাদা যে ঠিক আলপিনের ডগায় এনে তা চিহ্নিত করা মুশকিল। কিন্তু এ কথাও এড়ানো যায় না যে সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম জীবনে নিয়ে আসতে পারে বেশ কিছু ঝামেলার যোগান, যার ফলে একসময় সে প্রেমে আফসোস আসাও আশ্চর্য কিছু নয়।
একই বিভাগে কাজ করলে কাজের ওপর এ সম্পর্কের প্রভাব পড়তে পারে। এবং যদি অফিসে জানাজানি হয়ে যায় এবং সম্পর্কটি প্রতিষ্ঠিত রূপ লাভ করে, তবে সবসময়ই অন্যদের নজরদারিতে থাকতে হতে পারে। অনেকে হয়তো ধরেই নেবেন যে এ সম্পর্কের কারণেই ওই দুজন ব্যক্তি ভালোমতো কাজ করছেন না। সেই থেকে বসের কাছে অভিযোগ, দলাদলি—করপোরেট রাজনীতিতে আরও ফেঁসে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।
শুধু যে বাহ্যিক বিষয়গুলোই এখানে সমস্যার সৃষ্টি করে, তা নয়। নিজেদের মধ্যেও অফিসের বিষয় নিয়ে মতভেদ, তর্কাতর্কি হতে পারে। সঙ্গীও যখন একই জায়গায় কাজ করেন, সেক্ষেত্রে অফিস থেকে বের হয়েও মনে হতে পারে, আপনি অফিসেই আছেন—যা কিনা অনেকের কাছেই কাম্য নয়।
যদি বিচ্ছেদ ঘটে?
এই প্রশ্নটিই নেপথ্যে থেকে এ ধরনের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে। দুজন সহকর্মীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকার পর যদি তাদের বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে তা যেন প্রেম চলার সময় থেকেও বেশি অস্বস্তিতে ফেলবে। তখন এই দুজনকে এক টিমে দেওয়া যায় কি না বা যেকোনো কাজের বিষয়ে তারা তাদের পেশাদারিত্ব ধরে রাখতে পারলে সেটি কোনো বিষয়ই নয়। প্রয়োজন শুধু একটু পরিপক্ব মন-মানসিকতার।


