সিডনির বন্ডাই বিচে বন্দুক হামলা: সন্দেহভাজন ২ হামলাকারী বাবা–ছেলে
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে হানুক্কা উৎসব চলাকালে বন্দুক হামলার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দ্য গার্ডিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের ধারণা—বন্ডাই বিচে হামলায় জড়িত দুই বন্দুকধারী বাবা ও ছেলে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানিয়েছেন, বন্ডাই বিচের গুলিবর্ষণে জড়িত দুই বন্দুকধারী নিজেরাই এই হামলা চালিয়েছেন এবং তারা কোনো বৃহত্তর উগ্রবাদী সেলের অংশ ছিলেন না।
অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচারমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হামলাকারীদের সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে আলবানিজ বলেন, তারা 'স্পষ্টতই' উগ্রবাদী মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা আছে বলে পুলিশ মনে করছে না।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত গাড়িটি থেকে বিভিন্ন ধরনের আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করা হয়েছে।
বন্দুক হামলায় সন্দেহভাজন কারা
স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার বন্দুকধারী নাভিদ আকরাম (২৪) সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী নজরদারি তালিকায় ছিলেন না।
প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের ভাষ্য অনুযায়ী, রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করা নাভিদ ২০১৯ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন (এএসআইও)-এর নজরে আসে।
অন্য একটি উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে কথিত যোগাযোগের কারণে তাকে ছয় মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সন্ত্রাসবিরোধী তদন্তে ইসলামিক স্টেটের একটি সেলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ছিল।
তবে আলবানিজ বলেন, মূল্যায়নে দেখা যায় নাভিদের আচরণে কোনো তাৎক্ষণিক হুমকি বা সহিংসতায় জড়ানোর আশঙ্কা ছিল না।
পুলিশের ধারণা, হামলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
নাভিদ আকরামকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে গুরুতর আহত অবস্থায় সিডনির একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, নাভিদের বাবা সাজিদ আকরাম (৫০) ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, নাভিদ আকরামের পরিবার পুলিশের নথিতে নিবন্ধিত ছিল।
তার বাবার নামে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রও নিবন্ধিত ছিল এবং সবগুলো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, এসব অস্ত্রের মধ্যে একটি রাইফেল ও একটি শটগানসহ চারটি অস্ত্র বন্ডাই বিচের ঘটনাস্থল থেকেই জব্দ করা হয়।
বাকি অস্ত্রগুলো সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের কমিশনার মাল ল্যানিয়ন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, গতকালের হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা হামলার পরিকল্পনা করছিল—এমন কোনো আগাম ইঙ্গিত আমাদের কাছে ছিল না।
তিনি আরও নিশ্চিত করেন, সাজিদ আকরাম এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী ছিলেন।
হামলাকারীরা যে গাড়িতে ঘটনাস্থলে এসেছিল, সেখানে কোনো ইশতেহার বা ইসলামিক স্টেটের কালো পতাকা পাওয়া গেছে কি না—এমন প্রশ্নে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
অস্ত্র আইনে সংস্কার আনতে পারে অস্ট্রেলিয়া
আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ায় এক বন্দুকধারীর হামলায় ৩৫ জন নিহত হন। ওই ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম কঠোর অস্ত্র আইন প্রণয়ন করে।
হামলার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বয়ংক্রিয় ও আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ও শটগান নিষিদ্ধ করা হয় এবং দেশব্যাপী অস্ত্র ফেরত নেওয়ার কর্মসূচি চালু হয়। ২০০১ সালের মধ্যে এসব আইনের আওতায় নিষিদ্ধ হওয়া আনুমানিক ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪০টি আগ্নেয়াস্ত্র সরকার ফেরত নেয় বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
তবে অস্ট্রেলিয়া ইনস্টিটিউটের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব আইনের বাস্তবায়নে শিথিলতা এসেছে এবং বর্তমানে দেশে ১৯৯৬ সালের আগের তুলনায় বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
সংস্কারের পর অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক হামলার ঘটনা কমলেও, ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এক অস্ট্রেলীয় নাগরিকের হামলায় ৫১ জন নিহত হন। সে সময় নিউজিল্যান্ডে আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বিক্রি বৈধ ছিল।
আল জাজিরা জানিয়েছে, বন্ডাই বিচের সাম্প্রতিক হামলার পর নতুন করে অস্ট্রেলিয়ায় অস্ত্র আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।