তানজানিয়ায় সামিয়া হাসান জিতলেন শত শত প্রাণের বিনিময়ে
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোরে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়—সারি সারি পোড়া গাড়ি, পোড়া ঘর, আহত মানুষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়াছুড়ি ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সামিয়া সুলুহু হাসানের পোস্টার ছিঁড়ছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
এর ভেতর দিয়ে এলো তানজানিয়ার তথা পূর্ব আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সামিয়া সুলুহু হাসানের জয়ের সংবাদ।
পূর্ব আফ্রিকায় রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত শান্ত দেশ তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ভোটে সামিয়া বিজয়ী হলেও এই নির্বাচনে সংঘর্ষে শত শত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।
আজ শনিবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
তানজানিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নির্বাচন কমিশন জানায়, চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে সামিয়া পেয়েছেন ৯৭ দশমিক ৬৬ ভোট। আজ ফলাফল ঘোষণার পর তিনি দ্রুত শপথ গ্রহণ করবেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র আরও জানায়—গত বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছিলেন।
দেশটির জনসংখ্যা ৬ কোটি ৮১ লাখ ও ভোটার সংখ্যা ৩ কোটি ৭৭ লাখ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বচ্ছতার অভাব ও দেশজুড়ে সংঘর্ষের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনী সংঘাতে কয়েক শ মানুষ নিহত ও আরও কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার বিরোধীদল ছাদেমার এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত '৭০০ জন' নিহত হয়েছেন। তানজানিয়ার এক কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে যে বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে বলা যায় যে নির্বাচনী সংঘর্ষে অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছেন।
তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কোম্বো তাবিদ এই সংঘর্ষকে 'বিচ্ছিন্ন' ঘটনা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, 'নিরাপত্তা বাহিনী খুব দ্রুত পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়েছে।'
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, তানজানিয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করা যাচ্ছে না। সরকার এই সংঘর্ষের ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি শান্ত করতে কারফিউয়ের সময় বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল বন্দরনগরী দার এস সালামসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ হয়। তারা সামিয়ার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। পুলিশ ও ভোটকেন্দ্রগুলোয় হামলা চালান। এদিকে, সেনাবাহিনী সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছে।
আজ সকালে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্যাকবস মওয়ামবেগেলে বলেন, 'ছামা ছা মাপিনদুজি (সিসিএম) দলের প্রার্থী সামিয়া সুলুহু হাসান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।'
১৯৬২ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে সিসিএম প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসছে। তারপরও শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটলো দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায় যে এই নির্বাচনে সামিয়ার বিরোধী ১৬টি দলের কোনো প্রার্থীরই পর্যাপ্ত জনসমর্থন ছিল না।
মূলত তরুণরা এই বিক্ষোভে অংশ নেন এবং তারা এই নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করেন। তাদের অভিযোগ—সরকার গণতন্ত্রের বিকাশকে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে না। প্রধান বিরোধীদলের নেতাদের দমন করা হচ্ছে। একজনকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কারাগারে এবং অপরজনকে টেকনিক্যাল কারণে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়।
২০২১ সালে তানজানিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির আকস্মিক মৃত্যুর পর ভাইস প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত ২৯ অক্টোবর ভোটের মাধ্যমে তিনি দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেন।
