ঢাকায় ড্রোনের মাধ্যমে খাবার ডেলিভারি দেবে ইজাকায়া

By স্টার অনলাইন রিপোর্ট
17 October 2025, 06:55 AM
UPDATED 17 October 2025, 16:25 PM

ঢাকা শহর যেন জট পাকানো এক তারের জঙ্গল। তার ওপর ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকে সময়। উঁচু উঁচু ভবনের ছাদগুলোই শহরের একমাত্র শান্ত জায়গা। এমন শহরে খাবার ডেলিভারি মানে শুধু গতির খেলা নয়, বরং বেঁচে থাকার লড়াই। কিন্তু ড্রোনের মাধ্যমে ডেলিভারি দিয়ে জাপানি খাবারের রেস্টুরেন্ট ইজাকায়া এই দৃশ্যপট বদলে দিতে চায়।

ডেক্কো ইএসএইচও গ্রুপের রেস্টুরেন্ট ইজাকায়া তাদের গুলশান-২ আউটলেট থেকে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ড্রোনের মাধ্যমে খাবার ডেলিভারি করেছে।

লক্ষ্য ছিল গুলশান-বনানী এলাকার ছাদ। ইজাকায়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং ডেক্কো ইএসএইচও গ্রুপের পরিচালক রায়ানা হোসেন বলেন, 'এটা কোনো লোকও দেখানো কাজ নয় না। চাহিদা থেকেই এই উদ্যোগ। আমরা সব সময়ই ভোক্তাদের কাছে খাবার ডেলিভারির নতুন উপায় খুঁজছি।'

রায়ানার অভিযোগ, ফুড ডেলিভারি অ্যাপগুলো রেস্টুরেন্ট থেকে অতিরিক্ত চার্জ নেয়। এ বিষয়টি এড়ানোর তাগিদ থেকে তারা ড্রোন ডেলিভারির দিকে ঝুঁকেছেন।

তিনি তুলনা করে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শহরে অ্যাপের চার্জ ১৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনো সীমা নেই। এতে ছোট ব্যবসাগুলোর জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।'

ইজাকায়া তাই বড় ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম এড়িয়ে নিজেদের প্রক্রিয়া গরে তুলছে। ড্রোন ট্রায়াল এই বড় লক্ষ্যেরই অংশ—টেকসই বিকল্প তৈরি করা। তাদের এখন ঢাকার তিন জায়গায় আউটলেট রয়েছে— গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরা।

কীভাবে এটা কাজ করে

সবকিছু খুব সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ড্রোনগুলোকে গুলশান-বনানী এলাকায় নির্দিষ্ট বৃত্তাকার এলাকাজুড়ে ওড়ানো হয়েছে। খাবারগুলোকে বিশেষ ধরনের বাক্সে ভরে ড্রোনের সঙ্গে বেঁধে পাঠানো হয়। তবে আকাশপথটাও এতটা মসৃণ ছিল না।

রায়ানা হোসেন বলেন, 'ঢাকার কোথাও মাটিতে ড্রোন অবতরণ করানো প্রায় অসম্ভব কাজ। তারের জাল, ভিড় আর ট্রাফিক অনেক বড় বাধা। তাই ছাদই ছিল একমাত্র উপায়।'

তিনি জানান, গ্রাহকদের আগে থেকেই জানানো হয়েছিল। তারা ছাদে অপেক্ষা করছিলেন। বাক্স খুলে খাবার নেওয়ার পর ড্রোনটা আবার ফিরে আসত।

'এটা সহজ ছিল না। তবে এটা আদৌ সম্ভব কি না, আমরা সেটাই দেখতে চেয়েছি', যোগ করেন তিনি।

ফ্রি থাকবে না ড্রোন ডেলিভারি

রায়ানা জানান, ট্রায়াল ড্রোন ডেলিভারি ফ্রি ছিল। তবে ভবিষ্যতে এর দাম ঠিক করাটা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

'আমরা এখনো ডেলিভারি ফি ঠিক করিনি। ব্যাটারি লাইফ, নেভিগেশন সিস্টেম, খাবারের ওজন—সব মিলিয়ে খরচ বুঝতে হবে। নিরাপত্তা ঝুঁকিও আছে। কেউ ড্রোন নষ্ট করতে পারে। বড় আকারে চালাতে হলে অনুমতি পাওয়াটাও জটিল হবে', যোগ করেন তিনি।

Izakaya
ইজাকায়ার ফেসবুক পেজে ড্রোন ডেলিভারির বিজ্ঞাপন। ছবি: ফেসবুক

তবু রায়ানা আশাবাদী। বলেন, 'আমরা ন্যুনতম অর্ডারের সীমা নির্ধারণ করতে পারি। এতে এটা লাভজনক ও নিরাপদ হবে। তবে এখন আমরা শুধু শিখছি।'

ভবিষ্যতের এক ঝলক

ঢাকায় ড্রোনে খাবার ডেলিভারি অবিশ্বাস্য মনে হলেও রায়ানা এতে সম্ভাবনা দেখেন।

'বাংলাদেশ ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই মোবাইল পেমেন্টে চলে এসেছে। কে বলতে পারে ড্রোন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে না? মানুষও উৎসাহ দেখিয়েছে, কৌতূহলী ছিল। এখান থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি', বলেন তিনি।

তবে পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের পর আপাতত ড্রোন সেবা বন্ধ রেখেছে রেস্টুরেন্টটি।

তিনি জানান, তাদের টিম তথ্য বিশ্লেষণ করছে ও ফিডব্যাক নিচ্ছে। বোঝার চেষ্টা করছে— এটা কি শুধু এককালীন ট্রায়াল থাকবে, নাকি ভবিষ্যতেও দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে?

সফল হলে ঢাকার মতো শহরে খাবার ডেলিভারির নতুন মডেল হয়ে উঠতে পারে এটা। ইজাকায়ার মতো প্রতিষ্ঠান সাহস নিয়ে এগিয়ে আসলে ঢাকার রাস্তায় জ্যামে আটকে থাকা বা ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকা ডেলিভারি বাইকগুলোর বিকল্প হয়ে উঠতে পারে আকাশপথ।

ইজাকায়ার এই ট্রায়ালে হয়তো সব উত্তর মিলবে না, তবে তারা সঠিক প্রশ্নগুলোই তুলেছে।

মূল ইংরেজি প্রতিবেদনের লিংক