পানিতে চলার পাশাপাশি ‘উড়তেও’ পারবে যে সুপারইয়ট

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
13 February 2023, 06:02 AM

বিগত কয়েকমাস ধরে জলযানের জগতে সুপার ইয়টদের যাত্রা বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে ল্যাজারিনি ডিজাইন স্টুডিওর সম্প্রতি উদ্ভাবিত সুপারইয়টটিও ব্যতিক্রম নয়। 

ইতালিয়ান নকশাবিদ পিয়ারপাওলো ল্যাজারিনির নকশা করেছেন। ৭৪ মিটার দীর্ঘ, প্লেকট্রাম নামের এই ইয়টটি পানির উপরিতলে এত দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে যে উড়ছে বললেও ভুল হবে না। এই উড়ন্ত জলযানের পেছনে শক্তি যোগান দেবে হাইড্রোফয়েল প্রযুক্তি। 

ইতালিয়ান স্টুডিওর দলটি জানায়, এই নকশা মূলত আমেরিকাস কাপের 'মনোহাল' জলযান, অর্থাৎ একটিই মূল দেহ আছে এমন জলযানের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত; যা কি না পালতোলা ইয়টের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড়। 

তবে সাধারণ পালতোলা ইয়টের ক্ষেত্রে যা হয়, তার থেকে এর চলনশক্তি অনেকটাই আলাদা। বাতাসের দিকনির্দেশনার ওপর নির্ভর না করে এই 'কমলা সুন্দরী' ৩টি হাইড্রোজেন চালিত মোটরের দ্বারা পরিচালনা করা যাবে। এর একেকটি মোটরের ক্ষমতা ৫ হাজার অশ্বশক্তি পর্যন্ত, যা একে অন্যান্য ইয়ট থেকে পৃথক ও বিশেষ করে তোলে।

capture2.jpg
ছবি: ল্যাজারিনি ডিজাইন স্টুডিও

হাইড্রোফয়েল প্রযুক্তি এই ইয়টের নিচে যুক্ত পাখনাগুলোকে পানিতে চলার সময় উঠে আসতে সাহায্য করে, যার ফলে পানির নিচে নয়, উপরেই সগৌরবে চলে বেড়ায় এই জলযান। এই পাখনাগুলোর পানির প্রতিরোধ ক্ষমতাই এর উড়ে বেড়ানোর পেছনে ভূমিকা রাখে। 'প্লেকট্রাম' শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, এটি হচ্ছে তারজাতীয় বাদ্যযন্ত্র- যেমন গিটার বাজানোর সময় সহায়ক হিসেবে আঙুলে পরা কোনো বস্তু। আঘাতের মাধ্যমে সুর সৃষ্টি করাই এর কাজ। নামের মতো এই জলযানটিও যেন এর পানিপ্রতিরোধী পাখনাগুলো দিয়ে পানিতে আঘাতের মাধ্যমে নিজের চলার সুর সৃষ্টি করে।
  
জাহাজ বা নৌকা নির্মাণে ফয়েলিং প্রযুক্তি ব্যবহারের ইতিহাস বেশ পুরনো হলেও সম্প্রতি এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে আমেরিকা'স কাপের কারণে। 
এত বিশাল আকারের হাইড্রোফয়েল নির্মাণ নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব এক অর্জন। 

ল্যাজারিনি তার এক বক্তব্যে জানান, 'ভাবতে ভালো লাগে যে ১৯৬৪ সালেই জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি এ ধরনের জলযান নির্মাণের জন্য সক্ষম ছিল।' 
অর্থাৎ, পূর্বেও এ প্রযুক্তির প্রচুর সম্ভাবনা ছিল, তবে বর্তমানে এর যথাযথ প্রয়োগ ঘটছে। 

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মূলত নির্দিষ্ট ভ্রমণের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে জলযানটিকে উপযোগী করে তোলা সম্ভব। যেমন, নোঙর ফেলা অবস্থায় ইয়টটির প্রস্থ ১৫ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত করে রাখা যাবে। আবার সর্বোচ্চ গতিতে ভ্রমণের সময় পাতের আবরণ বন্ধ রেখে কড়িকাঠের প্রস্থ ২০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত করা যায়। ল্যাজারিনের দল জানায়, এই বিশেষ ধরনের নকশাটি একই আকারের গৎবাঁধা অন্য জাহাজগুলো থেকে বহুগুণ দ্রুত গতি দেবে এই সুপারইয়টকে। 

কমলা আরও কালো রঙের মিশেলে তৈরি ৪ স্তরবিশিষ্ট এই ইয়টের গতি ও ভ্রমণ দক্ষতা সম্পর্কে আরও ভালো করে জানা যায় সম্প্রতি প্রচারকৃত একটি ইউটিউব ভিডিও দেখলে। অপেক্ষাকৃত হালকা ওজনের এই জলযানটি তৈরি করা হয়েছে শুকনো কার্বন তন্তুজাত মিশ্র পদার্থ দিয়ে। যার ফলে দ্রুতগতিতে চলা আরও সহজ হবে। এই ইয়টের সর্বোচ্চ গতি হবে ৭৫ নট, যা কি না ঘণ্টায় ১৩৯ কিলোমিটারের শামিল। 

উল্লেখযোগ্য দ্রুতগতি ছাড়া বাকিসব সুবিধাও বেশ মনকাড়া এই জলযানের। এতে থাকবে ৬টি অতিথি কক্ষ, জাহাজমালিকের জন্য আলাদা স্যুট, একটি হেলিপ্যাড, একটি বিচ ক্লাব এবং ৪ স্তরবিশিষ্ট সুইমিং পুল। ল্যাজারিনির নকশাকৃত সব সুপার ইয়টের মধ্যে প্লেকট্রাম হচ্ছে বৈচিত্র্যময় সুবিধাযুক্ত সর্বশেষ সংযোজন। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২৫ সালে এটি বাজারে ছাড়া হবে। 

এ ছাড়া গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে এই স্টুডিও থেকে 'সোভরানো' নামে আরেকটি বিশালদেহী সুপার ইয়ট তৈরি করা হয়। ইতোমধ্যে রদ্রিগেজ নামের এক স্প্যানিশ স্টুডিও ডিজাইন এনেছে একটি ৫ ডেকযুক্ত এক সুপার ইয়টের নকশা করেছে। যাত্রীদের আয়েসের জন্য এতে বিশালাকৃতির হট টাব সুবিধাও রয়েছে। এই নতুন ইয়টের নাম হবে 'ক্যাটালিনা'। 

 

তথ্যসূত্র: সিএনএন, ইনডিপেনডেন্ট

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী