দুর্নীতি নয়, পারফরম্যান্সের কারণে সরানো হলো ফারুককে, বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা

By ক্রীড়া প্রতিবেদক
31 May 2025, 16:04 PM

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ফারুক আহমেদকে। এর কারণ হিসেবে দুর্নীতি নয়, বরং খারাপ পারফরম্যান্সের কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সবকিছু করা হয়েছে।

শনিবার পল্টন হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে ৩৫তম জাতীয় হ্যান্ডবলের ফাইনাল দেখতে এসে গণমাধ্যমের কাছে ফারুককে সরানোর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তার দৃষ্টিতে, বোর্ড প্রধান হিসেবে সাবেক এই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, 'এটা যেভাবে যাচ্ছে, এটা কোনো শাস্তি বা এরকম কিছু না। আমরা দেখেছি, বিগত নয় মাসে বিসিবিতে নতুন নেতৃত্ব আসার পর ক্রিকেটে যে প্রত্যাশা ছিল, সেই অনুযায়ী ক্রিকেটের উন্নয়ন আমরা দেখিনি।... আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, বিপিএল থেকে শুরু করে, সর্বোপরি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা ভালো নয়। আমাদেরকে তো বিচার করতে হবে পারফরম্যান্স দিয়ে। সেই পারফরম্যান্সটা আসলে আশানুরূপ না।' 

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সবশেষ বিপিএলের অব্যবস্থাপনা বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন তিনি, 'আমরা মনে করি বা বলি, ক্রিকেট আমাদের প্রধান খেলা। সেই জায়গা থেকে, বিগত সময়ের পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করে এবং বিপিএলের যে সত্যানুসন্ধান কমিটি ছিল, তাদের রিপোর্টে আমরা দেখেছি যে, অনেকগুলো অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে বিপিএলে যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, আপনারাই রিপোর্ট করেছেন, সেগুলোতে মোটামুটি ফারুক ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গিয়েছে।'

jabalia_camp.jpg
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

নির্বাচক কমিটি ও ক্রিকেটারদের উদাহরণ টেনে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, 'এটা এমন না যে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বা একারণে তাকে আমরা সরিয়েছি। এটা একেবারে পারফরম্যান্সভিত্তিক। আপনারা দেখেন, নির্বাচক কমিটি যদি দেখে, কোনো একজন খেলোয়াড় প্রতিনিয়ত খারাপ পারফরম্যান্স করছে, তাকে তো আর নির্বাচক কমিটি দলে রাখবে না। তো আমাদের দিক থেকেও ব্যাপারটা এরকম ছিল।'

ফারুককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তার জবাব, 'ব্যক্তিগত পর্যায়ে তো আমি কথা বলেছি।... পদ্ধতিটা কী? দুজনকে মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার এনএসসির (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ) আছে। এনএসসি চাইলে মনোনয়ন দিতে পারে, আবার সরিয়েও নিতে পারে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনোনয়ন দিয়েছি। আর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এখন আর মনোয়ন রাখার দরকার নেই।'

সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা, 'এখানে সরকারের হস্তক্ষেপের কিছু নেই। সরকার তার যতটুকু ক্ষমতা আছে, যতটুকু এখতিয়ারভুক্ত আছে, সেই বিবেচনায় হস্তক্ষেপ করেছে। দুজন পরিচালক দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের আছে, সরকার সেই জায়গায় পরবির্তন করেছে। সরকার সভাপতিকে অপসারণ করেনি। সভাপতির অপসারণটা হয়েছে এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী ফল হিসেবে।'

syrian_uprisings_from_russia_7.jpg
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আইসিসির নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। বরং জানিয়েছেন, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে মিলেছে সাধুবাদ, 'বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আরেকজন নতুন সভাপতি এসেছে। অনেকে এই বিষয়ে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কথাও বলেছেন। আমাদের আইসিসির সঙ্গে যথোপযুক্তভাবে যোগাযোগ হয়েছে এবং যিনি (আমিনুল ইসলাম বুলবুল) এখন সভাপতি হয়ে এসেছেন, তিনি নিজে আইসিসিতে দীর্ঘসময় কাজ করেছেন (আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে)। যোগাযোগের কোনো ফাঁক আমাদের দিক থেকে নেই। আইসিসিও এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান ক্রিকেটের যে অবস্থা, সেটা তো আইসিসিরও অজানা নয়। সেই জায়গা থেকে তারাও এই সিদ্ধান্তকে বা নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছে।'

আসিফ মাহমুদ উল্লেখ করেছেন, বিসিবির বাকি পরিচালকদের সঙ্গে ফারুকের বনিবনা হচ্ছিল না, 'বিসিবির নয়জন পরিচালকের মধ্যে আটজনই একটা অনাস্থা প্রস্তাব এনএসসিকে পাঠিয়েছে। এখানে কোনো দল হয়নি আসলে। ক্রিকেটে যেমন ১১ জন মাঠে খেললে দল হয়, বিসিবিতেও একটা দলের প্রয়োজনীয়তা আছে। বিসিবিতে ফ্যাসিবাদের সময় যারা ছিলেন, তারা গত ৫ আগস্টের পরপরই পালিয়ে গিয়েছেন। তারপর বাকি যারা আট-নয়জন পরিচালক আছেন, তারা কেউই আসলে উনার (ফারুক) সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না।'

তিনি বলেছেন, নিয়ম অনুসারেই বিসিবির নতুন সভাপতি হয়েছেন আমিনুল, 'যতটুকু জানি, বিসিবির নির্বাচন অক্টোবরে। আমরা তাকে কোনো সময়সীমা দেইনি। আমার যেটা কথা হয়েছিল আমিনুল ভাইয়ের সঙ্গে, আমি উনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করতে চান কিনা? উনি আইসিসিতে যে বেতন পান, আমরা সেটা প্রদান করতে পারছি না। কারণ এটা একটা সম্মানসূচক পদ।... তিনি তখন হ্যাঁ বলেছেন, রাজী হয়েছেন কাজ করার জন্য। তবে কোন পদে সেটা তখনও আমরা ঠিক করিনি। বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে বিসিবির বাকি পরিচালকরা উনাকে নিয়মানুযায়ী সভাপতি পদে নির্বাচিত করেছেন।'