২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেন্টমার্টিনের ট্রাভেল পাস প্রায় শেষ, জানুয়ারির কোটা এখনো খালি
আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেন্টমার্টিন ভ্রমণের প্রায় সব ট্রাভেল পাস ইস্যু হয়ে গেলেও দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায় এখনো ভাটা চলছে।
পর্যটন পুনরায় শুরুর পর প্রতিদিন রাত্রিযাপনের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২ হাজার পাসের কোটা কোনো দিনই পূরণ হয়নি।
ফলে স্থানীয় পর্যটন নির্ভর অর্থনীতিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
সরকারি ওয়েবসাইট www.travelpass.gov.bd–এর তথ্য বলছে, এর মধ্যেই চলতি বছরের ১২ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সব ট্রাভেল পাস ইস্যু হয়ে গেছে।
তবে জানুয়ারির বড় অংশের উল্লেখযোগ্য কোটা এখনো খালি রয়েছে।
২৬ ডিসেম্বর থেকে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিনই কিছুসংখ্যক পাস অবশিষ্ট রয়েছে। আর জানুয়ারির বহু দিনের বড় অংশই ফাঁকা পড়ে আছে।
বছরজুড়ে বন্ধ থাকার পর দ্বীপে পর্যটন কার্যক্রম চালু হয়েছে প্রায় এগারো দিন আগে।
তবে রাত্রিযাপনকারী কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ২ হাজার জনের জন্য।
কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো দিনই সে সংখ্যাও স্পর্শ করেনি।
সরকারি ওয়েবসাইটটিতে প্রতিদিন কত পাস ইস্যু হয়েছে আর কতটি বাকি আছে—তা নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়।
পর্যটকদের পাস সংগ্রহের প্রক্রিয়া আগের মতোই আছে। আগে এজেন্ট বা জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান থেকে টিকিট কিনতে হয়। এরপর জাহাজ কর্তৃপক্ষ সেই তথ্য অনুযায়ী পাস ইস্যু করে।
বাংলাদেশ সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, ২৫ তারিখ পর্যন্ত বরাদ্দ প্রতিদিনের ২ হাজার ট্রাভেল পাসের বিপরীতে আমাদের জাহাজগুলোর সব টিকিট প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সরকার এই রুটে ছয়টি জাহাজকে অনুমতি দিয়েছে। তবে কিছু কোম্পানি এখনো চলাচল শুরু করেনি।
এমভি কাজল এক–দুই দিনের মধ্যে চলাচল শুরু করবে, আর 'আটলান্টিক ক্রুজ শিপ'–এর অনুমোদনও প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
বাহাদুর বলেন, 'আমাদের দুই জাহাজের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৬০০–এর বেশি, কিন্তু বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ হাজার জন'।
ফলে অনেক যাত্রীর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নিতে পারছেন না তারা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই বাড়ির অতিরিক্ত ঘর পর্যটকদের থাকার জন্য বরাদ্দ করেছেন। এখন তারা পর্যটক কম আসায় উদ্বিগ্ন।
দ্বীপবাসী মো. আমিন জানান, পর্যটকের আনাগোনা বাড়লেও তিনি মাত্র দুই দিনের জন্য কিছু পর্যটক পেয়েছেন।
তিনি বলেন, 'যারা ছোট কটেজ বানিয়েছেন তাদেরও একই অবস্থা। সমুদ্রসংলগ্ন রিসোর্টগুলো আগে থেকেই বুক হয়ে যায়, আর সেগুলোর মালিক বেশিরভাগই বাইরে থেকে এসেছেন। স্থানীয়রা পরে পর্যটক পান। আমাদের মৌসুম মাত্র দুই মাস হওয়ায় টিকে থাকা কঠিন'।
দ্বীপের পশ্চিম পাশে গ্রিন বিচ রিসোর্টের মালিক মো. সোহেল জানান, সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় তারা পর্যাপ্ত অতিথি পাচ্ছেন, কিন্তু যারা নিজের বাড়ি পর্যটকদের উপযোগী করেছেন তারা পর্যাপ্ত ভাড়া পাচ্ছেন না।
সেন্টমার্টিন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিবলী আযম কোরেশী বলেন, ডিসেম্বরের শুরুতে ব্যবসা মন্থর ছিল, তবে মানুষের আনাগোনা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
দ্বীপের আচার বিক্রেতা আবদুল্লাহ জানান, আগের মৌসুমে তার দৈনিক বিক্রি ছিল ১০–১৫ হাজার টাকা। আর এখন তা নেমে এসেছে ৪–৫ হাজার টাকায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং 'আল্লাহর দান' হোটেলের মালিক নুর মোহাম্মদ বলেন, দুই বছর আগে তার দৈনিক বিক্রি ছিল প্রায় ১ লাখ টাকা, বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৩০–৪০ হাজার টাকায়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২২ অক্টোবর দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে।
পূর্ববর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী, এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটন বন্ধ ছিল।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে। আর রাত্রিযাপন করা যাবে শুধু ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে।
তবে রাত্রিযাপনের অনুমতি না থাকায় নভেম্বরে কেউই দ্বীপে যাননি।