তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর

By স্টার অনলাইন রিপোর্ট
11 November 2025, 11:24 AM

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় ঘোষণার তারিখ আগামী ২০ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ নির্ধারণ করেন। টানা ১০ দিন শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।

এর আগে, ২০১১ সালের ১০ মে, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন।

আপিলের শুনানিতে আবেদনকারীদের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আদালতের কাছে ২০১১ সালের রায় পুনর্বিবেচনা করে বাতিলের আবেদন করে বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হোক, যেন দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

শুনানিতে অংশ নিয়ে পাঁচ নাগরিকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া।
বিএনপির পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদিন, মো. বদরুদ্দোজা বাদল ও মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, মোফাজ্জল ইসলামের পক্ষে আইনজীবী শাহরিয়ার কবির, এবং অধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও ইমরান সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক।

গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ নাগরিক, নওগাঁর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল ইসলাম এবং কয়েকটি অধিকার সংগঠন ২০১১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন।

বেশ কয়েকটি রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ পাঁচ নাগরিক ও বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি আপিল করার অনুমতি দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রথম রিভিউর আবেদন যে পাঁচ নাগরিক করেছিলেন, তাদের মধ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বাদিউল আলম মজুমদার রয়েছেন। আবেদনে তারা বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল; ফলে এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশে পরিণত হয়েছে, যা কোনোভাবেই বাতিল করা যায় না।

আবেদনে তারা আরও বলেছিলেন, আপিল বিভাগের ২০১১ সালের রায়টি আত্মবিরোধী, কারণ সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেছিল যে পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন তথা ১০ম ও ১১তম সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা উল্লেখ করা হয়নি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার যথাক্রমে গত বছরের ১৬ ও ২৩ অক্টোবর পৃথক দুটি রিভিউ আবেদন দাখিল করেন।

এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল ইসলাম দুটি রিভিউ আবেদন দাখিল করেছিলেন। রিভিউ আবেদনে তিনি বলেছিলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো প্রমাণ করেছে যে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণার রায় প্রকাশের পর সে বছরের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তসহ আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এ বিষয়ে ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সংশোধনী কার্যকর করে তৎকালীন সরকার।