নাচ-গানে শেষ হলো মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলা উৎসব

মিন্টু দেশোয়ারা
মিন্টু দেশোয়ারা
6 November 2025, 05:26 AM

কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে রাসনৃত্যের বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠেছিল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মণিপুরী সম্প্রদায়।

নাচ-গানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়েছে মণিপুরীদের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব—মহারাসলীলা।

2.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ মাঠে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায় এবং আদমপুরের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স মাঠে মী-তৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় মহারাসোৎসব ও মেলা।

বর্ণিল এই উৎসব উপভোগ করতে দেশ-বিদেশ থেকে আসেন হাজারো দর্শনার্থী।

3.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

মাধবপুর (শিববাজার) জোড়া মণ্ডপ মাঠে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ১৮৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

অন্যদিকে আদমপুর গ্রামে বিষ্ণুপ্রিয়া ও মী-তৈ মণিপুরীদের ৪০তম আলাদা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

8.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, 'মাধবপুর জোড়া মণ্ডপ রাসোৎসব এ অঞ্চলের মধ্যে এক অনন্য আয়োজন। মণিপুরীদের রাসলীলার বিভিন্ন ধরন রয়েছে—নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, বসন্তরাস, মহারাস, বেনিরাস বা দিবারাস।'

4.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

তিনি আরও জানান, 'শারদীয় পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় বলে মহারাসকে মণিপুরীরা পূর্ণিমারাসও বলে থাকে। এই উৎসব উপলক্ষে প্রায় ২০ দিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়।'

9.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে মাঝরাতে শুরু হয় মহারাসের মূল আয়োজন। প্রথম পর্বে দিনের বেলায় মণিপুরী শিল্পীরা শ্রীকৃষ্ণের শৈশব ও বাল্যকালের নানা ঘটনা গান ও নৃত্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন, যেখানে অংশ নেয় অসংখ্য শিশু শিল্পীও।

5.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

দ্বিতীয় পর্বে রাতে শুরু হয় মহারাসের মূল অংশ, যেখানে কৃষ্ণের নানা ভাব ও রাধার আগমন মিলে গীতনৃত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় রাধা-কৃষ্ণের লীলা। চাঁদ ডোবা ও ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে শেষ হয় এ অনবদ্য রাসউৎসব।

10.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

কবি সনাতন হামোম বলেন, 'রাসলীলার গানগুলো বিখ্যাত বৈষ্ণব পদকর্তা জয়দেব, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাসের পদাবলি থেকে সংগৃহীত। বাংলা, ব্রজবুলি, মৈথিলী ও সংস্কৃত ভাষার পদ ছাড়াও সাম্প্রতিক কালে মণিপুরি ভাষাতেও রাসলীলার গান রচিত হচ্ছে।'

6.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

রাসলীলার উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র কাঞ্চিপুর এলাকায় বাস করতেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন, শ্রীকৃষ্ণ ভানুমুখ পাহাড়ে কাঁঠালগাছ হয়ে রাজার অপেক্ষায় আছেন।'

11.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

'পরদিন রাজা পাহাড়ে গিয়ে গাছটি খুঁজে পান এবং সেটি রাজধানীতে এনে কৃষ্ণমূর্তি নির্মাণের নির্দেশ দেন। সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠার উপলক্ষে তিনি অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপূর্ণিমায় মহারাসলীলা উৎসবের সূচনা করেন। তার কন্যা বিম্বাবতীও সেই প্রথম রাসে অংশ নেন। ঘটনাটি ঘটে ১৭৭৯ সালে।'

7.jpg
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

উৎসবে আসা পর্যটক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই রাসনৃত্যের গল্প শুনেছি। আজ নিজের চোখে দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি।'