ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ইসলামী ব্যাংকের ওএসডি কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ, দীর্ঘ যানজট

By নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
4 October 2025, 08:36 AM
UPDATED 4 October 2025, 14:40 PM

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বরখাস্ত ও ওএসডি কর্মকর্তারা ছয় দফা দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।

আজ শনিবার সকাল ১১টা থেকে তারা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহার এলাকায় মহাসড়কটি অবরোধ করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

অবরোধের ফলে রাস্তার উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

553217377_2041122083323879_5454105060154172849_n.jpg
ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

এর আগে শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) বরখাস্ত ও ওএসডি কর্মচারীরা একই দাবি আদায়ের জন্য রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেন।

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে—চাকরিচ্যুত সবাইকে স্বপদে বহাল, হাজারো কর্মীর ওএসডি অবিলম্বে প্রত্যাহার, কর্মচারীদের ওপর আরোপিত শর্তসাপেক্ষ মূল্যায়ন পরীক্ষা বন্ধ, 'শাস্তিমূলক বদলি' বন্ধ এবং ন্যায্য কর্মপরিবেশ তৈরি করে সব কর্মচারীকে কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনা।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পরিবার।

তারা অভিযোগ করেছেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের অফিসিয়াল আইডি ও বেতন অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

চাকরিচ্যুত কর্মচারী মো. এমদাদ হোসেন বলেন, 'আমাদের আজ ব্যাংকে থাকার কথা। কিন্তু আমাদের দাঁড়াতে হয়েছে রাজপথে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করে একটি প্রহসনের পরীক্ষা নিয়ে ৩০০ জনেরও বেশি কর্মীকে চাকরিচ্যুত ও ৫ হাজারের বেশি কর্মীকে ওএসডি করেছে।'

আরেক চাকরিচ্যুত কর্মচারী হুমায়ুন মুখতার রশিদ বলেন, 'আমাদের পরিবারগুলো এই বেতনের ওপর নির্ভরশীল। আমরা বেতন পাচ্ছি না, আমাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই মানবেতর জীবনের দিকে যাচ্ছি। এই সংকটে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই।'

আরেকজন কর্মচারী মোহাম্মদ সোহেল প্রশ্ন তোলেন, কেন তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে। তার ভাষ্য, তারা সাধারণ কর্মী এবং তাদের কোনো আর্থিক অনিয়মের রেকর্ড নেই। 'আমরা খাবারও কিনতেও পারছি না।'

আরেক কর্মচারী আশরাফুল হক বলেন, 'আট বছর চাকরি করার পর মূল্যায়ন পরীক্ষা দেওয়া মানে এটা একটা প্রহসন। ওএসডি করা, চাকরিচ্যুত করা—সবই অবৈধ। আমাদের বরখাস্তের কারণ উল্লেখ করে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়নি। এটা আমাদের অধিকার লঙ্ঘন।'

তাদের অভিযোগ, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা সম্প্রতি অফিসে হামলার শিকার হয়েছেন।

২০১৭ সালের পর ইসলামী ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করা হলে এই সংকটের শুরু হয়। মূলত এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির মালিকানা দখলের পর যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের জন্যই এই পরীক্ষার আয়োজন। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে বিশেষ করে পটিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে।

পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আসার পর ব্যাংকটি এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে। পরীক্ষায় ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ৪১৪ জন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত না হওয়া ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মচারীকে পরের দিনই তাৎক্ষণিকভাবে ওএসডি করা হয়।

এ ছাড়া, এই পরীক্ষার বিরোধিতা করা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে আরও ৪০০ জন কর্মচারীকে দুই ধাপে বরখাস্ত করা হয়।