আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

By স্টার অনলাইন রিপোর্ট
27 December 2024, 11:36 AM
UPDATED 27 December 2024, 17:52 PM

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সংস্কার খুব বড় স্বপ্ন। ঐক্য দরকার। নির্বাচনে আমাদের যেতে হবে। কিন্তু তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের উদ্যোগে আয়োজিত 'সংলাপ অধিবেশন ১: ঐক্য কোন পথে' শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিগত আমলে লুণ্ঠনের যে কী মাত্রা, সেটা তারা গবেষণা না করলে জনগণ কল্পনাও করতে পারত না এবং ফলস্বরূপ আমরা একটা ভয়ংকর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।

'এটাকে ঠিক করতে হবে। প্রশ্ন হলো, সেগুলো ঠিক করার জন্য যে সময়, সেই সময় কি জনগণ আমাদের দিবে কি না', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আপনারা সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা নিয়ে আলোচনা করছেন, কিন্তু বাদ বাকি লোকেরা কোথা থেকে মহার্ঘভাতা পাবে সেই আলোচনা তো শুনি না৷ একটা আলোচনা শুনলাম না সে বিষয়ে। শিক্ষিত যুব সমাজের জন্য যুবভাতা প্রচলন হবে কি না, সেটা তো আমরা শুনলাম না তো। ধৈর্য ধরব কীভাবে? যদি আমার পাশের বাসায় রাত ১১টায় ডাকাতি হয়, সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত এলাকায়, যদি ওই নিরাপত্তা আমার না থাকে, তাহলে কতদিন আমরা সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করে থাকব?'

'আইন-শৃঙ্খলার যদি এই অবস্থা হয় সচিবালয়ের ভেতরে, তাহলে আমাদের নিরীহ নাগরিকের কী অবস্থা হবে? কার কাছে যাব?', প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'সংস্কার খুব বড় স্বপ্ন। ঐক্য দরকার। নির্বাচনে আমাদের যেতে হবে। কিন্তু তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে৷ সংস্কারমুখী মানুষকে বিপথে নিয়ে যাবেন না। এগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। উপরি আলোচনা করেন, কিন্তু মানুষের জীবন-জীবিকা ও নিরাপত্তার কথা ভুলে যাবেন না।'

সংস্কারের ব্যাপারে তিনি বলেন, কাঠামোগত এবং প্রশাসনিক বিষয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, তবে আমার কাছে ঘাটতি লাগে যতখানি উপরিকাঠামো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, দেশের তথা সমাজের ভিত্তি নিয়ে ওতখানি আলোচনা হচ্ছে না।

'এই যে যত আলোচনা আপনারা শুনলেন, তার মধ্যে কারও আলোচনায় আপনি শুনেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন কত হবে? সে ন্যায্য মজুরি কীভাবে পাবে? আমন ফসল আসছে, আমার কৃষক দাম পাবে কি না? আপনি কি জানেন এই সময় মধ্যবিত্ত ৮০ টাকায় শাকের আঁটি কী করে খাবে? সেই আলোচনা তো আসেনি৷ এই যে সবাই বসে আছে, একবারও তো আলোচনা হলো না কর্মসংস্থান কেমন করে হবে? ওই সংস্কার কি আমি দেখেছি? কিসের উপরিকাঠামো ঠিক করবেন যদি আমার ভিত ঠিক না থাকে? আসল ক্ষমতায়ন তো রুটি রুজির ক্ষমতায়ন', বলেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কী নিয়ে ঐক্য হবে এ নিয়ে আমরা সাধারণ আলোচনা করেছি এবং খুব পরিষ্কারভাবে এসেছে আমাদের ইতিহাসের উপলব্ধি থেকে ঐক্য না, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঐক্য করতে হবে৷ এটি হলো ঐক্যের জায়গা।

'ইতিহাসের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা-বিবরণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে নিয়ে, আমাদের স্বপ্নের জায়গা নিয়ে ঐক্য করতে হবে। আমরা মনে হয় এই জায়গাটা ক্রমান্বয়ে পরিষ্কার হচ্ছে। ওই যে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ আমরা যে যার আদর্শিক রাজনীতির বিভিন্ন অবস্থান থেকে দেখব, তার কি ন্যূনতম কোনো জায়গা আছে কি না, যেখানে আমরা একমত হতে পারব। যে মত আমাকে বলবে গণতন্ত্র থাকবে, স্বেচ্ছাচারিতা, নির্যাতন, নিপীড়ন থাকবে না এবং বিকাশের সুযোগ থাকবে?', যোগ করেন তিনি।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি বলব এমন বাংলাদেশ আমরা চাই যেখানে সর্বজনীন মানবাধিকার থাকবে, সব মানুষের অধিকার থাকবে, সব মানুষ বলতে পিছিয়ে পড়া মানুষ, নদী ভাঙনের কবলে পড়া মানুষ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের আদিবাসীরা, দলিত সম্প্রদায়, নারী-পুরুষ, ধর্মীয় পরিচয় এবং লিঙ্গগত পরিচয়ের জন্য যারা বিভেদের মধ্যে আছে, আমি তাদের কথা বলছি। সেই মানুষগুলোর কথা বলার অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, সমাবেশ করার অধিকার এবং জীবিকা নির্বাহ করার অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে।