আইসিইউ, সিসিইউ ও এইচডিইউ কী, ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্টে কখন নেওয়া হয়
আইসিইউ, এইচডিইউ, সিসিইউ, লাইফ সাপোর্ট বা ভেন্টিলেশন—এই শব্দগুলো আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের অস্পষ্টতা যেমন আছে, রয়েছে ভুল ধারণাও।
কখন কোন পরিস্থিতিতে রোগীকে কোথায় নেওয়া হয়—বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হাসান মোস্তফা রাশেদ।
এইচডিইউ বলতে কী বোঝায়
ডা. হাসান মোস্তফা রাশেদ বলেন, এইচডিইউয়ের পূর্ণরূপ হলো 'হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট'। এটা ওয়ার্ড এবং আইসিইউয়ের মাঝামাঝি অবস্থা। রোগীর অবস্থা যখন খারাপ থাকে এবং তার কন্টিনিউয়াস মনিটরিংয়ের প্রয়োজন হয়, তখন এইচডিইউতে নেওয়া হয়। এখানে প্রতিনিয়ত রোগীর রক্তচাপ, পালস, রক্তে লবণ, অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা, হৃদযন্ত্রের মনিটরিং, প্রস্রাব ও স্যালাইনের পরিমাণ এসব দেখা হয়।
আইসিইউ কী
আইসিইউয়ের পূর্ণরূপ 'ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট'। এটাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটও বলা হয়। যখন কোনো রোগীর একাধিক অঙ্গের কার্যকারিতা একসঙ্গে কমে যায় তখন তার বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। যেমন: ফুসফুস ও কিডনি একইসঙ্গে কাজ করছে না, ফলে তাকে হাইফ্লো অক্সিজেন বা ভেন্টিলেশন মেশিনের মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখা হচ্ছে এবং ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে কিডনির কাজ চালানো হচ্ছে। সঙ্গে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কন্টিনিউয়াস মনিটরিং প্রক্রিয়াও চালানো হয়। এরকম জটিল মেডিকেল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সার্বক্ষণিক বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফের সমন্বয়ে একটা টিম আইসিইউতে কাজ করে।
অনেক সময় কোনো রোগী এইচডিইউতে থাকা অবস্থায় অবনতি হয়, যেমন: রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বিপদজনক পর্যায়ে চলে যায়। তখন তাকে আইসিইউতে নিয়ে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেওয়া হয়। আবার আইসিইউতে থাকা কোনো রোগীর অবস্থার উন্নতি হলে সরাসরি ওয়ার্ডে শিফট না করে স্টেপ ডাউন হিসেবে এইচডিইউতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে অবস্থার আরও উন্নতি সাপেক্ষে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
আইসিইউয়ের মধ্যেও বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে। যেমন: সার্জিকাল আইসিইউ, নিউরো আইসিইউ, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ (পি-আইসিইউ), নিওনেটাল আইসিইউ (এন-আইসিইউ) ইত্যাদি।
রোগীকে কখন সিসিইউতে নিতে হয়?
সিসিইউয়ের পূর্ণরূপ 'করোনারি কেয়ার ইউনিট'। হৃদরোগজনিত জরুরি অবস্থা যেমন: হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলর, হৃৎস্পন্দন জনিত সমস্যা, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, অতি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেন্সিভ ইমারজেন্সিসহ হার্টের গুরুতর সমস্যা যার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন এবং চিকিৎসায় কয়েক মিনিট দেরি রোগীর জন্য প্রাণঘাতী হয়, এসব ক্ষেত্রে রোগীকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সহজ কথায় শুধুমাত্র হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতার জন্য সিসিইউ।
কোনো হৃদরোগীর যদি হার্টের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে মাল্টিপল অর্গান ফেইলর থাকে এবং তার জন্য সাপোর্ট দরকার হয়। যেমন: ফুসফুস, ব্রেন বা কিডনি তখন আইসিইওতেই রোগীর চিকিৎসা করতে হবে। অর্থাৎ সিসিইউ শুধু হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত রোগীদের জন্য।
ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট
ডা. হাসান মোস্তফা রাশেদ বলেন, রোগীর চরম সংকটময় অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিলে এবং রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা রক্ষা করতে না পারে এই অবস্থাকে আমরা বলি রেস্পিরেটরি ফেইলর। সেই অবস্থায় শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্রম সচল রাখার প্রক্রিয়া হলো ভেন্টিলেশন। সাধারণ মানুষ যেটাকে বলে লাইফ সাপোর্ট।
লাইফ সাপোর্ট হলো বিশেষায়িত সরঞ্জামের মাধ্যমে শরীরের বিকল অঙ্গগুলোর অপরিহার্য কাজগুলো সচল রাখা। এর মধ্যে ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, কিডনি অথবা এই সবকটির সাপোর্ট অন্তর্ভুক্ত। ফুসফুস তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেললে সাপোর্টের জন্য ভেন্টিলেশন মেশিন ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ভেন্টিলেশনে থাকা মানে এক প্রকার লাইফ সাপোর্টে থাকা। কিডনির জন্য বিভিন্ন ধরনের ডায়ালাইসিস মেশিন, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের বিকল্প হিসেবে ইসিএমও মেশিন ব্যবহার করা হয়।
এটি ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন যা মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন নামেও পরিচিত। এক্ষেত্রে রোগীর গলার মধ্যে দিয়ে একটি নল প্রবেশ করিয়ে ফুসফুসে বাতাস সরবরাহ করা হয়। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে ভেন্টিলেশন মেশিন এ কাজ করে থাকে। ভেন্টিলেটরে থাকা অবশ্যই লাইফ সাপোর্টের একটি রূপ।
কখন লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন হয়
১. নিউমোনিয়া, দুর্ঘটনা, স্ট্রোক, মস্তিষ্কে আঘাত—এসব ক্ষেত্রে রোগী শ্বাস নিতে না পারলে ভেন্টিলেটর মেশিন দরকার হয়।
২. হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা বড় ধরনের অপারেশনের পর রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ ওষুধের মাধ্যমে লাইফ সাপোর্টে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
৩. কিডনি বিকল হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস লাইফ সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে।
৪. প্রসবজনিত জটিলতা, বড় সার্জারির পর গুরুতর রোগীকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয়।



