অলস বিকেলে ঘরেই বানাতে পারেন যেসব বাঙালি নাশতা

By জীবনযাপন ডেস্ক
8 December 2025, 12:46 PM

বাঙালি স্ন্যাকস বা হালকা নাশতার মধ্যে রয়েছে মুচমুচে ভাজাভুজি থেকে শুরু করে রসে টইটম্বুর মিষ্টি। এসব খাবারের মূল আকর্ষণ হলো—এগুলো তৈরির প্রক্রিয়া ভীষণ সহজ। কোনো জটিল রেসিপির মারপ্যাঁচ নেই। কিন্তু স্বাদে ষোলো আনা। বিভিন্ন ধরনের ডালের বড়া, কিমা আলু শিঙাড়া থেকে শুরু করে মুড়ির মোয়া বা গজা; এসব খাবার আমাদের বিকেলের চা পানের পর্বকে পরিণত করতে পারে উৎসবে।

এক কাপ গরম মসলা চা কিংবা এক গ্লাস নোনতা লাচ্ছির সঙ্গে যাই পরিবেশন করা হোক না কেন, এসব খাবারের প্রতিটি কামড়েই থাকে নস্টালজিয়া, উষ্ণতা ও ঘরোয়া আনন্দের স্বাদ। চায়ের সঙ্গে টা-এর এই আয়োজন মনে করিয়ে দেয়, জীবনের সেরা আনন্দগুলো রান্নাঘর থেকেই আসে।

evening_snacks_2.jpg
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ/স্টার

মিক্সড ডালের বড়া

উপকরণ
• ১/৪ কাপ মসুর ডাল
• ১/৪ কাপ মুগ ডাল
• ১/৪ কাপ খেসারি ডাল
• ১/২ কাপ পেঁয়াজ কুঁচি
• ৪টি কাঁচা মরিচ কুঁচি
• ১ চা-চামচ চিলি ফ্লেক্স
• ১/৪ কাপ ধনে পাতা কুচি
• স্বাদ মতো লবণ
• ভাজার জন্য তেল

প্রণালি

ডালগুলো ধুয়ে ৫-৬ ঘণ্টা বা নরম হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পানি ঝরিয়ে নিন। এবার একটি ফুড প্রসেসরে ডালগুলো আধা-ভাঙা করে নিন। মিশ্রণটি একটি পাত্রে ঢেলে বাকি উপকরণগুলো এক সঙ্গে মিশিয়ে নিন। সবকিছু ভালোভাবে মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন।

এবার একটি প্যানে তেল গরম করুন, যেন ডুবো তেলে ভাজা যায়। অল্প অল্প করে বড়ার আকৃতিতে গরম তেলে মিশ্রণটি ছাড়ুন। সোনালি-বাদামি রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। ভাজা হলে তুলে নিয়ে কিচেন পেপারের ওপর রাখুন যেন অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়।

পছন্দের চাটনি বা সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন!

কিমা আলু শিঙাড়া

উপকরণ
• ৫০০ গ্রাম গরু বা খাসির মাংসের কিমা
• ২টি সেদ্ধ আলু ছোট কিউব করে কাটা
• ২ কাপ ময়দা
• ১ চা-চামচ আদা বাটা
• ১/২ চা-চামচ রসুন বাটা
• ১/২ চা-চামচ জিরা
• ১ চা-চামচ লাল মরিচ গুঁড়া
• ১/২ চা-চামচ হলুদ গুঁড়া
• ১/৪ কাপ পেঁয়াজ কুঁচি
• ৩টি কাঁচা মরিচ কুঁচি
• ১/২ চা-চামচ গরম মসলা গুঁড়া
• স্বাদ মতো লবণ
• পুরের জন্য ১ টেবিল চামচ তেল
• ৪ টেবিল চামচ ঘি
• ভাজার জন্য তেল

প্রণালি

একটি প্যানে তেল গরম করে জিরা দিন। জিরার রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করলে আদা-রসুন বাটা দিন। কয়েক সেকেন্ড ভাজুন। এবার একে একে মাংসের কিমা, লাল মরিচের গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, গরম মসলা গুঁড়া ও লবণ দিন। ভালো করে মিশিয়ে নাড়ুন।

৭-৮ মিনিট রান্না করুন। সেদ্ধ আলু, পেঁয়াজ কুঁচি ও কাঁচামরিচ কুঁচি দিন। কয়েক মিনিট ভেজে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। এটি পুরোপুরি ঠান্ডা হতে দিন।

এবার একটি পাত্রে ময়দা, লবণ ও ঘি মেশান। পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে একটি শক্ত খামির তৈরি করুন। খামিরটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে বল তৈরি করুন। প্রতিটি বল ডিম্বাকৃতি ছোট রুটির মতো বেলে নিন এবং প্রতিটি অর্ধেক করুন।

প্রতিটি অর্ধেক রুটির কিনারা পানি দিয়ে হালকা ভিজিয়ে একটি কোন বা ত্রিভুজের আকার দিন। এবার কিছু মাংস-আলুর পুর ভরে কিনারাগুলো সিল করে শিঙাড়ার আকার দিন।

একটি প্যানে তেল গরম করুন। শিঙাড়াগুলো অল্প আঁচে বাদামি এবং মুচমুচে না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। একটি সার্ভিং প্লেটে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

পোস্তর বড়া

উপকরণ
• ১/২ কাপ পোস্তদানা
• ১/২ কাপ গরম পানি পোস্ত ভেজানোর জন্য
• ২ টেবিল চামচ পোস্তদানা (বড়ার চারপাশে মাখাতে আলাদা করে তুলে রাখুন)
• ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুঁচি
• ৩-৪টি কাঁচা মরিচ মিহি কুঁচি
• ৩ টেবিল চামচ নারকেল কোরা
• ২-৩ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া
• ১/২ চা-চামচ আদা-রসুন বাটা
• স্বাদ মতো লবণ
• ভাজার জন্য সর্ষের তেল

প্রণালি

পোস্তদানা আধঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। একটি ছাঁকনির ওপর রেখে অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে গ্রাইন্ডারের জারে নিন। পোস্তদানা বেটে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। প্রয়োজন হলে খুব সামান্য পানি যোগ করা যেতে পারে।
এবার আরেকটি পাত্রে পোস্তবাটা নিয়ে তাতে একে একে পেঁয়াজ কুঁচি, কাঁচা মরিচ, নারকেল কোরা, লবণ, আদা-রসুন বাটা ও চালের গুঁড়া যোগ করুন। সব উপকরণ ভালো করে মেশান।

হাতে হালকা তেল মাখিয়ে মিশ্রণটি থেকে অল্প অল্প অংশ নিয়ে একটি চ্যাপ্টা বড়া তৈরি করুন। এবার বড়াগুলো পোস্তদানার ওপর গড়িয়ে নিন।

প্যানে তেল গরম করুন। বড়াগুলো মাঝারি আঁচে সোনালি-বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। গরম গরম পরিবেশন করুন।

evening_snacks_3.jpg
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ/স্টার

নিমকি

উপকরণ
• ২ কাপ ময়দা
• ১/২ চা-চামচ কালোজিরা
• ৪ টেবিল চামচ ঘি
• ১/২ কাপ পানি
• স্বাদ অনুযায়ী লবণ
• তেল

প্রণালি

একটি পাত্রে ময়দা, লবণ, কালোজিরা ও ঘি মিশিয়ে ময়ান দিন। এবার এতে পানি দিয়ে খামির তৈরি করুন। খামিরটি ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে ১৫ মিনিট রেস্টে রাখুন।

এরপর খামিরটি দিয়ে বড় করে পাতলা রুটি বেলে নিন। একটি ছুরি দিয়ে আপনার পছন্দের আকারে কেটে নিন। সাধারণত নিমকি বরফি আকৃতিতে কাটা হয়।

এবার একটি প্যানে তেল গরম করুন। নিমকিগুলো অল্প আঁচে হালকা বাদামি এবং মুচমুচে না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। ভাজা হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে একটি পেপার টাওয়েলের ওপর রাখুন, যাতে তেল ঝরে যায় এবং ঠান্ডা হয়। 
নিমকি দীর্ঘ সময় ভালো রাখতে একটি এয়ার টাইট পাত্রে সংরক্ষণ করুন।

টিপস: নিমকি অবশ্যই অল্প আঁচে ভাজতে হবে। আঁচ বেশি হলে নিমকিগুলো দ্রুত বাদামি হয়ে যাবে এবং ভেতরে কাঁচা ও নরম থাকবে।

মুরালি

উপকরণ
• আড়াই কাপ ময়দা
• আড়াই টেবিল চামচ গুঁড়া দুধ
• প্রয়োজন মতো পানি
• তেল
• ২ কাপ চিনি
• ১/২ চা চামচ বেকিং পাউডার
• এক চিমটি লবণ

প্রণালি

একটি পাত্রে ময়দা, গুঁড়া দুধ, বেকিং পাউডার ও লবণ নিন। ভালো করে মিশিয়ে এতে অল্প অল্প করে পানি দিয়ে ভালোভাবে মেখে খামির তৈরি করুন। খামিরকে থেকে চারটি ভাগ করুন। প্রতিটি অংশ প্রায় আধা ইঞ্চি পুরু করে বেলে নিন। তারপর সেখান থেকে আঙুলের মতো লম্বা করে কেটে নিন।

এবার একটি প্যানে তেল গরম করুন। মুরালিগুলো অল্প আঁচে মুচমুচে না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। খেয়াল রাখবেন যেন এগুলো লাল না হয়ে যায়।

মুরালির বাইরে চিনির আস্তরণের জন্য প্রথমে একটি সসপ্যানে ২ কাপ চিনির সঙ্গে ১ কাপ পানি মিশিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়ুন। বেশ ঘন সিরা তৈরি করতে হবে।

তারপর ভাজা মুরালিগুলো সিরায় ঢেলে ভালোভাবে মেশান। যেন মুরালিগুলোর সবদিকে ভালোভাবে চিনির আস্তরণ লাগে।

এখন ঠান্ডা হতে দিন। পুরোপুরি ঠান্ডার হলে এয়ার টাইট কনটেইনারে ভরে সংরক্ষণ করুন এবং পরিবেশন করুন।

evening_snacks_4.jpg
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ/স্টার

মুড়ির মোয়া

উপকরণ
• ২৫০ গ্রাম মুড়ি
• ৭০০ গ্রাম গুড়
• ২ কাপ পানি

প্রণালি

একটি লোহার শুকনো কড়াইতে মুড়িগুলো প্রায় এক মিনিট ভেজে বা টেলে নিন। কড়াই থেকে নামিয়ে একপাশে রাখুন। একটি প্যানে গুড় এবং পানি নিন। অল্প আঁচে গুড় গলিয়ে নিন। গুড় গলে গেলে আঁচ বাড়িয়ে ফুটিয়ে নিন এবং দুই তারের মতো ঘন সিরা না হওয়া পর্যন্ত জোর আঁচে রান্না করুন। 

দুই তারের সিরা হতেই মিশ্রণটিতে দ্রুত মুড়ি মিশিয়ে দিন। আঁচ থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ ঠান্ডা হতে দিন। এখন মোয়া তৈরির পালা। মিশ্রণটি খুব আঠালো মনে হলে হাত পানিতে ভিজিয়ে গোল গোল বল তৈরি করুন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।

গজা

উপকরণ
• ২ কাপ ময়দা
• ১ কাপ চিনি
• এক চিমটি বেকিং পাউডার
• ২ টেবিল চামচ ঘি
• ২টি ছোট এলাচ
• ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
• লবণ
• তেল

প্রণালি

একটি ভারী তলার প্যানে চিনি, পানি ও এলাচ নিয়ে ফুটতে দিন। ঘন ঘন নাড়তে হবে। সিরা ঘন হয়ে এলে আঁচ কমিয়ে দিন। চিনির সিরা দুই তার হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে লেবুর রস দিন। লেবুর রস সিরাকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। সিরাটি ঢেকে রাখুন যেন গরম থাকে।

একটি পাত্রে ময়দা, লবণ ও বেকিং পাউডার মেশান। এখন ঘি দিয়ে ভালোভাবে ময়ান দিন। অল্প অল্প করে পানি দিয়ে বেশ শক্ত খামির তৈরি করুন।

খামিরটি সমান অংশে ভাগ করুন। এবার একেকটি অংশ ডিম্বাকৃতিতে বেলে নিন। এখন ছুরি বা কাঁটাচামচ দিয়ে ডিম্বাকৃতির রুটিগুলোর ওপর কয়েকটি দাগ কেটে দিন।

একটি প্যানে পর্যাপ্ত ঘি বা তেল গরম করুন। গজাগুলো হালকা বাদামি ও মুচমুচে না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এই কাজটি বেশ ধৈর্য নিয়ে করতে হবে। এরপর ঝাঁঝরি চামচ দিয়ে তেল থেকে তুলে কিচেন টাওয়েলের ওপর রাখুন।

ভাজা গজাগুলো চিনির সিরায় ডুবিয়ে নিন। দ্রুত চারদিকে সিরা মাখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে রাখুন। সিরা শুকিয়ে যাওয়ার পর পরিবেশন করুন।

নারকেলের নাড়ু

উপকরণ
• ৪ কাপ তাজা নারকেল কোরা
• ২ কাপ গ্রেট করা গুড়
• ১ চা চামচ ঘি (হাতে মাখানোর জন্য)

প্রণালি

একটি ভারী তলা বিশিষ্ট প্যানে তাজা নারকেল কোরা নিন। অল্প আঁচে জ্বাল দিন। ঘন ঘন নাড়তে হবে। কয়েক মিনিট ভেজে নিন যেন নারকেলের ভেতর ভেজা ভাবটা চলে যায়। এখন একে গুড় মেশান। অনবরত নেড়ে খুব ভালোভাবে মেশাতে হবে।

ক্রমাগত নাড়তে নাড়তে প্রায় ৫-৬ মিনিট রান্না করুন। গুড় গলে যাবে এবং মিশ্রণটি বেশ আঠালো ও ঘন হয়ে আসবে। ঠিকঠাক হলো কি না দেখতে সামান্য মিশ্রণ তুলে হাতে বল বানিয়ে দেখুন সেটি বলের আকার নিচ্ছে নাকি ভেঙে যাচ্ছে। বল তৈরি হলে পুরো মিশ্রণ চুলা থেকে নামিয়ে সামান্য ঠান্ডা করে হাতে ঘি মাখিয়ে ছোট ছোট বন বা নাড়ুর আকার দিন।

নোনতা লাচ্ছি

উপকরণ
• ২ কাপ দই
• ১/২ চা চামচ লবণ
• ১/৪ চা-চামচ বিট লবণ
• ১/২ চা-চামচ চাট মসলা
• সাজানোর জন্য তাজা পুদিনা পাতা

প্রণালি

পুদিনা পাতা ছাড়া সব উপকরণ একটি ফুড প্রসেসর বা ব্লেন্ডারের জারে নিন। সব কিছু ভালোভাবে ব্লেন্ড করে একটি মসৃণ লাচ্ছি তৈরি করুন। গ্লাসে ঢালুন, বরফ দিন ও তাজা পুদিনা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

মসলা চা

উপকরণ
• ২ টেবিল চামচ চা-পাতা
• ৪ টেবিল চামচ বা স্বাদমতো চিনি
• ১/২ চা চামচ থেঁতো করা আদা
• ২টি লেমন গ্রাস ছোট করে টুকরো করে কাটা
• ২টি ছোট এলাচ
• ২ কাপ দুধ

প্রণালি

একটি সসপ্যানে ২ কাপ পানি, চা-পাতা, চিনি, লেমন গ্রাস ও আদা একসঙ্গে নিয়ে মাঝারি আঁচে ২ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার এতে দুধ মিশিয়ে আবার মাঝারি আঁচে ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন যাতে উপচে না পড়ে এবং আরও ৪-৫ মিনিট ফুটতে দিন।

মাঝে মাঝে নেড়ে দিন। এবার ছেঁকে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

অনুবাদ করেছেন জ্যোতি রশীদ