শিশুদের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার নিষিদ্ধের আইন যেভাবে কার্যকর করছে অস্ট্রেলিয়া

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
9 December 2025, 19:40 PM

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধে আইন কার্যকর করেছে অস্ট্রেলিয়া। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে দেশটিতে এ আইন কার্যকর হলো।

আইন অনুযায়ী, এখন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না ১৬ বছরের কম বয়সীরা। একইসঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে থাকা শিশুদের প্রোফাইলগুলোও 'ডিঅ্যাক্টিভেট' করে দেওয়া হয়েছে। 

নিষেধাজ্ঞার আওতায় বর্তমানে ১০টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সেগুলো হলো—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, থ্রেডস, টিকটক, এক্স, ইউটিউব, রেডডিট ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম কিক অ্যান্ড টুইচ।

তবে মেসেঞ্জার কিডস, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল ক্লাসরুম এবং ইউটিউব কিডসের মতো কিছু প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার করতে পারবে শিশু-কিশোররা। 

সরকারের দাবি, অনলাইনের ক্ষতিকর কন্টেন্ট এবং সাইবার বুলিং থেকে শিশুদের সুরক্ষা দেবে এ সিদ্ধান্ত। একইসঙ্গে স্ক্রিন আসক্তি থেকেও দূরে থাকবে শিশুরা।  

প্রতিক্রিয়া

আইন কার্যকরের পর শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে অভিভাবক, প্রযুক্তিবিদসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। 
 
১৪ বছর বয়সী এমিলি বিবিসিকে জানায়, 'সোশ্যাল মিডিয়া বিপজ্জনক এবং আসক্তিকর। নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকেই এখন সরকারকে ঘৃণা করতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয় ভালো কিছু হবে।' 

তবে এমিলি তার বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশাল ইনফ্লুয়েন্সার ১৪ বছর বয়সী এলা ও জোয়ে বিবিসিকে বলে, 'অনলাইন থেকে ক্ষতিকারক কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলুন, আমাদের নয়।'

দৈনন্দিন রুটিনে নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে জোয়ে জানায়, তিনি আর সৃজনশীল আউটলেট তৈরি করতে পারবেন না।

আর মেলবোর্নের ১৫ বছর বয়সী এজরা শোল বিরল স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তার বক্তব্য, 'সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের ফলে আমার পৃথিবী আরও ছোট হয়ে গেল।'

তবে সরকারের নতুন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এক অভিভাবক বলেন, 'এটি একটি দারুণ পদক্ষেপ। আশা করি সরকার যথাযথভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে।'

সমালোচকদের একটি গ্রুপ সরকারকে রোবলক্স ও ডিসকর্ডের মতো অনলাইন গেমিং সাইটগুলোকেও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আইনি চ্যালেঞ্জ

অনেক কিশোর-কিশোরী মনে করছেন, এই আইন তাদের সাংবিধানিক অধিকার, বিশেষ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করবে। 

ইতোমধ্যে ডিজিটাল ফ্রিডম প্রজেক্ট (ডিএফপি) নামে একটি গ্রুপ মামলা দায়েরের ঘোষণা দিয়েছে।

তাদের মতে, প্রতিবন্ধী, এলজিবিটিকিউ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু-কিশোররা তথ্য সংগ্রহ ও সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভর করে।

কার্যকর কীভাবে

শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে আগ্রহের কমতি নেই। অনেক অভিভাবকও শিশুদের শিক্ষণ পদ্ধতির জন্য অনেকক্ষেত্রে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন আসে অস্ট্রেলিয়া সরকার নতুন আইন কার্যকর করবে কীভাবে।

এ আইন ভঙ্গ করার জন্য কোনো শিশু ও অভিভাবককে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।

আইন অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম বয়সীদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো যোগাযোগমাধ্যম সেটি করতে ব্যর্থ হলে তাকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা গুণতে হবে।

প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর বয়স নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সরকারি আইডি বা ফেইস রিকগনাইজেশন পদ্ধতি। 

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বক্তব্য

ইউটিউব জানিয়েছে, দ্রুত এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা শিশুদের আরও অনিরাপদ করে তুলতে পারে। ইতোমধ্যেই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম প্রায় পাঁচ লাখ শিশু-কিশোরের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিকেশনস মন্ত্রী আনিকা ওয়েলস বলেন, 'আমরা অভিভাবকদের পাশে আছি, সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মের নয়। শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বে উদাহরণ স্থাপন করবে অস্ট্রেলিয়া এবং বড় প্রযুক্তি কোম্পানির চাপের কাছে নত হবে না।'

কেন এমন আইন

২০২৫ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া সরকারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১০-১৫ বছর বয়সী অন্তত ৯৬ শতাংশ শিশু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে ৭ জন ক্ষতিকর কনটেন্টের সংস্পর্শে এসেছে। এরমধ্যে রয়েছে নারীবিদ্বেষী এবং হিংসাত্মক কনটেন্টের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসজনিত ব্যাধি ও আত্মহত্যায় উদ্ভুদ্ধ করা কনটেন্ট। 

প্রতি ৭ জনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক বা বড়দের কাছ থেকে খারাপ আচরণের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন এবং অর্ধেকের বেশি বলেছেন যে তারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ

ক্রিসমাস বা বড়দিনের ছুটি শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ হলো।

এ অবস্থায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ছুটির সঠিক ব্যবহারের জন্য বিকল্প কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

রেকর্ড করা ভিডিও-বার্তায় তিনি বলেন, 'একটি নতুন খেলা শুরু করুন, একটি নতুন বাদ্যযন্ত্র শিখুন অথবা সেই বইটি পড়ুন যা অনেক দিন ধরে আপনার শেলফে পড়ে আছে।'

বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটানোর পরামর্শ দেন তিনি।