টিউলিপের সাজা নিয়ে যা লিখেছে গার্ডিয়ান

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
1 December 2025, 14:43 PM
UPDATED 1 December 2025, 22:40 PM

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম শেখ হাসিনাকে পাঁচ বছরের, রেহানাকে ৭ বছরের ও টিউলিপকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের একটি আদালত দুর্নীতির অভিযোগে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে তার 'অনুপস্থিতিতেই' দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে সেখানে লেখা হয়েছে, তিনি তার খালা ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্লট বরাদ্দ দিতে প্রভাবিত করেছিলেন। এজন্য তাকে মামলার প্রধান আসামি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রসিকিউশন মামলায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন দণ্ডও চেয়েছিল।

মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে যা বলছে গার্ডিয়ান

প্রতিবেদনে বলা হয়, রায় ঘোষণার সময় টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের অভিযুক্ত অন্য সদস্যরা কেউই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

প্রসিকিউশন দাবি করে, টিউলিপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফোনকল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে পরিবারের জন্য জমি নিশ্চিত করতে ঢাকায় গিয়েছিলেন।

তবে এসব যোগাযোগের কোনো প্রমাণ তারা আদালতে দিতে পারেনি দাবি গার্ডিয়ানের।

গার্ডিয়ান আরও লিখেছে, এই তথ্য দুজন সাক্ষীর জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে, যারা তখন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কর্মরত ছিলেন।

দুদক গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, টিউলিপের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

গার্ডিয়ানকে টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতিক্রিয়া

গার্ডিয়ানকে দেওয়া বক্তব্যে, টিউলিপ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, প্রসিকিউশন যে প্রমাণ দিয়েছে 'তার অনেকটাই জাল'।

তিনি বলেন, 'আমাকে মামলার বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আইনজীবী নিয়োগেরও সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং পুরো প্রক্রিয়াটি "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত"।'

তার ভাষায়, 'এই ক্যাঙ্গারু কোর্টের রায় যেমন অনুমানযোগ্য ছিল, তেমনই এটা অযৌক্তিকও।'

তিনি আরও দাবি করেন, শৈশবের পর তিনি কখনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট রাখেননি এবং তার নামে যে নথি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দেখাচ্ছে তা জাল।

তিনি বলেন, হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের জনগণই সবসময় তার অগ্রাধিকার, এবং বাংলাদেশের 'নোংরা রাজনীতিতে' তিনি বিচলিত হবেন না।

ব্রিটিশ আইনজীবী ও লেবার পার্টির সমালোচনা

গার্ডিয়ান জানায়, কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক আইনমন্ত্রীসহ একদল শীর্ষ ব্রিটিশ আইনজীবী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন, টিউলিপের এই বিচার 'কৃত্রিম, সাজানো ও অন্যায্য'।

তাদের অভিযোগ, টিউলিপ অভিযোগের বিবরণ জানার অধিকার, আইনজীবী পাওয়ার অধিকার, মৌলিক ন্যায়বিচারের সুযোগ—কিছুই পাননি।

টিউলিপের দল লেবার পার্টিও জানিয়েছে, ন্যায়সংগত শুনানির সুযোগ না থাকায় তারা এই রায়কে স্বীকৃতি দিতে পারে না।

দলেটির এক মুখপাত্র গার্ডিয়ানকে বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও অভিযোগের বিবরণ জানানো হয়নি।

গার্ডিয়ান আরও দাবি করে, টিউলিপ যে আইনজীবীকে নিয়োগ করেছিলেন তাকে ঢাকায় গৃহবন্দি করা হয়।

গার্ডিয়ানের বর্ণনায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল অগ্রাধিকারগুলোর একটি হলো শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত দুর্নীতি ও মানবতাবিরোধী অভিযোগের বিচার করা। এর আগে গত সপ্তাহে আরেক দুর্নীতির মামলায় হাসিনাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

টিউলিপ গার্ডিয়ানকে বলেন, তিনি তার খালাকে কেন্দ্র করে হওয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

যুক্তরাজ্যের প্রভাব ও সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোনো প্রত্যার্পণ চুক্তি নেই। গার্ডিয়ান বলছে, তাই টিউলিপের কারাদণ্ড ভোগের বাস্তব সম্ভাবনা কম।

তবে এ রায় তার বাংলাদেশ ভ্রমণে বাধা তৈরি করতে পারে। এমনকি তার জন্য বাংলাদেশের মিত্ররাষ্ট্রগুলোতেও ভ্রমণ জটিলতা তৈরি হতে পারে।

প্রতিবেদনটি উল্লেখ করে, বাংলাদেশে আনা এই অভিযোগ যুক্তরাজ্যে চলা আরেকটি তদন্ত থেকে আলাদা। ওই তদন্তে তার খালার সমর্থকদের সঙ্গে তার আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

গার্ডিয়ান বলছে, ওই অভিযোগে কোনো নিয়মভঙ্গের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন টিউলিপ।