ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা কম, কে এগিয়ে দৌড়ে?

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
8 October 2025, 08:14 AM
UPDATED 8 October 2025, 14:29 PM

এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে একটি বিষয় প্রায় নিশ্চিত—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যত বড় দাবিদারই হোন না কেন, এবার তিনি পুরস্কারটি পাচ্ছেন না। প্রশ্ন হলো, তাহলে কে জিতছেন সর্বোচ্চ সম্মানজনক এই পুরস্কার?

আগামী শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় নরওয়ের অসলোতে নোবেল কমিটি বিজয়ীর নাম ঘোষণা করলে এই অপেক্ষার অবসান হবে।

সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী এর চেয়ে বেশি সংঘাতময় আর কখনোই ছিল না। এমন এক প্রেক্ষাপটে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হতে যাচ্ছে।

ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, 'আটটি সংঘাত' সমাধানে কাজ করেছেন তিনি। ভারত-পাকিস্তানকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। এসবের জন্য এই পুরস্কার তারই প্রাপ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত এ বছর নোবেল কমিটি তাকে বেছে নেবে না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, সুইডিশ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, 'না, এ বছর ট্রাম্প পুরস্কার পাচ্ছেন না। হয়তো আগামী বছর পেলেও পেতে পারেন। গাজা সংকটসহ তার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক তত দিনে থিতিয়ে আসবে।'

অনেক বিশেষজ্ঞই ট্রাম্পের 'শান্তি স্থাপনকারী' দাবিকে অতিরঞ্জিত মনে করেন। তার 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতিও বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হচ্ছে। অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, 'গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টার বাইরে আমরা ট্রাম্পকে এমন সব নীতি গ্রহণ করতে দেখেছি, যা আলফ্রেড নোবেলের মূল উদ্দেশ্য—আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব এবং নিরস্ত্রীকরণের—বিরুদ্ধে যায়।'

নিনা গ্রেগারের মতে, ট্রাম্পের এমন অনেক কর্মকাণ্ড রয়েছে যা নোবেলের আদর্শের সঙ্গে মেলে না। যেমন: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহুপক্ষীয় চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার, মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের সঙ্গেই বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করা এবং মতপ্রকাশ ও অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।

নোবেল কমিটির পাঁচ সদস্যের প্রধান ইয়োর্গেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেন, 'আমরা পুরো চিত্রটিই বিবেচনায় নিই। একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব বা একটি সংস্থার সার্বিক কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা প্রথম এবং সর্বাগ্রে দেখি শান্তির জন্য তারা আসলে কী অর্জন করেছেন।'

আলোচনায় কারা?

এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংস্থাকে মনোনীত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই তালিকা আগামী ৫০ বছরের জন্য গোপন রাখা হবে।

এ বছর কোনো সুস্পষ্ট ফেবারিট না থাকলেও বেশ কয়েকটি নাম আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে আছে যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষপীড়িত সুদানে জীবন বাজি রেখে ক্ষুধার্ত মানুষকে সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবকদের নেটওয়ার্ক 'ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস', ক্রেমলিনের সমালোচক আলেক্সেই নাভালনির বিধবা স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা 'অফিস ফর ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস'।

নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক হালভার্ড লাইরা বলেন, নোবেল কমিটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে 'মানবাধিকার, গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের' মতো বিষয়গুলোতে জোর দিচ্ছে। তিনি বলেন, 'আমার ধারণা, এ বছর খুব একটা বিতর্কিত কোনো প্রার্থীকে বেছে নেওয়া হবে না।'

ট্রাম্পের নীতির বিপরীতে গিয়ে বৈশ্বিক শৃঙ্খলার প্রতি নিজেদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতে কমিটি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বা জাতিসংঘের কোনো সংস্থা যেমন শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বা ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-কে বেছে নিতে পারে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকেও (আইসিসি) পুরস্কার দেওয়া হতে পারে। আবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর চলমান আক্রমণের প্রেক্ষাপটে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসকেও সম্মান জানানো হতে পারে।

তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নোবেল কমিটি অতীতে বহুবার সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কোনো বিজয়ী বেছে নিয়েছে। তাই এবারও তেমন কিছু হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।