জোহরানের ‘জয়’ ইসরায়েলপন্থিদের জন্য ‘চরমবার্তা’

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
27 June 2025, 02:02 AM

চলতি জুনের শুরুতে এক শুক্রবার নিউইয়র্কের মেয়র প্রত্যাশী জোহরান মামদানি সিদ্ধান্ত নেন পুরো ম্যানহাটন পায়ে হেঁটে প্রচারণা চালাবেন। শুরু করলেন সন্ধ্যা ৭টায়। শেষ হয় ভোররাত আড়াইটায়। 

আজ বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়—সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় নিউইয়র্কবাসীদের কেউ কেউ জোহরানকে আলিঙ্গণ করছেন, কেউ কেউ করতালি দিয়ে তাদের 'ভবিষ্যৎ মেয়র'কে স্বাগত জানাচ্ছেন।

Zohran at Mayoral Debate
প্রাইমারি ডিবেটে অংশ নিচ্ছেন জোহরান মামদানি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

তিনি ভক্তদের উদ্দেশে বলেন—নিউইয়র্কে এমন মেয়র দরকার যাকে নিউইয়র্কবাসী দেখতে পাবেন, যার কথা শুনতে পারবেন, এমনকি, তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারবেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—৩৩ বছর বয়সী জোহরানের সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট স্ক্রল করলে বোঝা যায় তার জীবনযাপন কেমন, প্রচলিত রাজনৈতিক নেতাদের থেকে তিনি কতটা আলাদা।

গত মঙ্গলবার তিনি নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে বিজয়ী হওয়ায় এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বিশাল জনগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।

এমন এক জনপ্রিয় নেতার নিজ দলের মনোনয়ন জয়ে আতঙ্কিত নিউইয়র্কের ইহুদিরা।

গতকাল বুধবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুসালেম পোস্ট জানায়—নিউইয়র্কের মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যেট প্রার্থী হিসেবে জোহরানের মনোনয়ন সেখানকার ইহুদিদের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

এতে আরও বলা হয়—ফিলিস্তিনপন্থি জোহরানের জয়ে অনেক ইহুদির মনে প্রশ্ন জেগেছে যে তারা যে শহরকে নিজেদের 'বাড়ি' বলে মনে করেন তাদের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে?

নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের ডেমোক্র্যোট পার্টির স্থানীয় পর্যায়ের এক নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয়ী সাবান (৩২) জোহরানের বিজয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

Zohran and his mom
মা মীরা নায়ারের সঙ্গে জোহরান। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ৪৫তম অ্যাসেম্বলি ডিসট্রিক্টের নেতা জয়ী সাবান মনে করেন, 'এটি ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য চরম সতর্কবার্তা। নিউইয়র্কে ১২ থেকে ১৩ লাখ ইহুদি বাস করেন। সম্ভবত তাদের অর্ধেক নির্বাচনে ভোট দেবেন। এটা অনেক বড় ইস্যু।'

তিনি মনে করেন, নিউইয়র্কের ইহুদিরা অপর ডেমোক্র্যেটিক প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে বিশ্বাস করেছিল। আশা করা হয়েছিল, তিনি সমাজ থেকে ইহুদিবিদ্বেষ দূর করবেন। কিন্তু, আমরা প্রতারিত হয়েছি।'

নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দা ও মিডিয়া পরামর্শক ষাটোর্ধ্ব আভিভা মিলার বলেন, 'জোহরান নিজেই ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন। তার মনোনয়ন পাওয়ায় এটা প্রমাণিত হয় যে ইহুদিবিদ্বেষ ঘটছে।'

Zohran fans
জোহরান মামদানির ভক্ত-সমর্থকরা ওয়াচ পার্টিতে অংশ নিচ্ছেন। ছবি: রয়টার্স

তার মতে, এই ব্যক্তি ইহুদিবিরোধী বা ইসরায়েলবিরোধী কিনা এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফিলিস্তিনের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে ইহুদি-অধ্যুষিত শহরে 'জয়' পাওয়া।

আভিভা মিলারের বিশ্বাস, এই ব্যক্তির প্রার্থিতা পুঁজিবাদ, পশ্চিমা সভ্যতা ও আমেরিকান জীবনব্যবস্থার জন্য হুমকি। এটি শুরু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক বাসিন্দা জেরুসালেম পোস্টকে বলেন, 'আমি জোহরানের প্রতিদ্বন্দ্বী অপর ডেমোক্র্যেটিক প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর ইসলামবিরোধী বক্তব্যও পছন্দ করি না। ট্রাম্পের অর্থদাতারা কুমোকে সমর্থন দিয়েছে। আমি এটাও পছন্দ করছি না।'

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী নভেম্বরে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যেট পার্টির মনোনয়ন জেতা জোহরান বিজয়ী হতে পারবেন কিনা তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে, তার মনোনয়ন শহরের ইহুদি বাসিন্দাদের মনে অস্বস্তি তৈরি করেছে।

zohran.jpg
জোহরান মামদানি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গতকাল আল জাজিরার এক মতামতের শিরোনামে বলা হয়—জোহরানের 'বিজয়' যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থিদের জেগে ওঠার 'প্রতীক'।

এতে বলা হয়, জোহরান যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলছেন সেগুলো কংগ্রেসে ইলহান ওমর ও রাশিদা তায়েবও বলছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রে বামপন্থি আন্দোলনের নতুন রূপ দিয়েছেন। তাদের কথা শুনছেন অভিবাসীসহ স্থানীয়রাও। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বহু মানুষ।

গতকাল দ্য নিউইয়র্ক টাইমস'র প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রগতিশীল তরুণ ইহুদিদের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। তারা প্রবীণ ইহুদিদের কার্যকলাপে ধৈর্য্য হারাচ্ছেন। কেননা, প্রবীণ ইহুদিরা ইসরায়েলকে ক্রমাগত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ করা যেতে পারে, উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জন্ম জোহরান মামদানির বাবা অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি ও মা ভারতীয় চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার। জোহরানের স্ত্রী সিরীয় চিত্রশিল্পী রামা দুয়াজি থাকেন ব্রুকলিনে। নির্বাচিত হলে জোহরান হবেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র।

ডেমোক্র্যেট প্রার্থিতার লড়াইয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া ব্র্যাড ল্যান্ডার ইহুদি পরিবারে জন্ম নেওয়া উদারপন্থি রাজনীতিবিদ। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরানকে সমর্থন জানিয়ে এক সঙ্গে কাজ করা অঙ্গীকার করেছেন। এতে উঠে আসে যে, নিউইয়র্কের অনেক উদারপন্থি ইহুদির সমর্থন জোহরানের প্রতি আছে।