৩ অভিনেতার চোখে বিজয়ের স্মৃতি
নায়ক সোহেল রানা, তারিক আনাম খান ও রাইসুল ইসলাম আসাদ—তিনজনই মুক্তিযোদ্ধা। এই তিন গুণী শিল্পী ১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছেন।
বিজয়ের দিনে তারা কোথায় ছিলেন, কীভাবে দিনটি পার করেছেন? সেই স্মৃতি নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
সোহেল রানা
সত্যি কথা বলতে, ১৯৭১ সালের নভেম্বরের দিকে আমরা বুঝতে পারি যে পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে পারবে না। বিজয় আমাদের হবেই।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বুঝে যাই, বিজয় আসছে, আমরা স্বাধীন হতে যাচ্ছি, স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছি। সেই সময় যুদ্ধের ময়দানে যারা ছিলাম, তাদের মধ্যে অসম্ভব রকমের আত্মবিশ্বাস দেখা দেয়—আমরা জয়ী হব।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ করে ১৬ ডিসেম্বর আসে। বিজয়ের আনন্দে সেদিন কী যে খুশি হয়েছিলাম, কী যে আনন্দ পেয়েছিলাম। চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। আমার মতো অনেকেই বিজয়ের আনন্দে, বিজয়ের খুশিতে কেঁদেছিলেন।
আমরা কয়েকজন মিলে স্টেনগান দিয়ে গুলি করেছিলাম ওপরের দিকে। মনে হয়েছিল, বুক থেকে পাথর নেমে গেছে। মনে হয়েছিল, জীবনের সবচেয়ে বড় কিছু পেলাম। কেননা, একটি দেশ পাওয়ার চেয়ে বড় কিছু তো নেই।
এরপর একটি রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলাম। আর পরের দিন আমরা রাজধানীর পথে রওনা দিই।
তারিক আনাম খান
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমি ছিলাম সাতক্ষীরা—ওখানেই আমার বাড়ি। ওখানকার কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা উঠেছিলেন। সেসময় গেটে নিরাপত্তা দিতে হতো। আমিও সেখানেই ছিলাম।
ওই জায়গাকে আইবি বলতো—যেখানে মুক্তিবাহিনী ক্যাম্প করে। ১৬ ডিসেম্বর ভোর থেকেই বুঝতে পারি বিজয় আসন্ন। যেকোনো সময় পতন হবে ওদের, মুক্ত হবে দেশ।
তখন টেলিফোন সহজ ছিল না। স্বাধীন বাংলা বেতার শুনতাম। সেখানেই শুনতে পাই মিত্রবাহিনী এগোচ্ছে, মুক্তিবাহিনী এগোচ্ছে। বেলা গড়ায় আর এক এক করে সবাই বাড়ি থেকে বের হতে থাকে। আমরাও বের হই। এরপর শুরু হয় বিজয় উল্লাস। ফাঁকা গুলি হতে থাকে। সেই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
তবে, খুলনা মুক্ত হয় একদিন পর। আমরা খুলনার দিকে রওনা দিই ১৬ ডিসেম্বর। দিনটি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে, সারাজীবন থাকবে।
রাইসুল ইসলাম আসাদ
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমি ঢাকায় ছিলাম। ঢাকা শহরেই যুদ্ধ করেছি আমরা। বিজয়ের আনন্দের মতো বড় কী আর হতে পারে! কত অপেক্ষা একটি বিজয়ের জন্য। কত রক্ত, কত শহীদ, আর কত মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বিনিময়ে এসেছিল বিজয়। এই গল্প বলে শেষ করা যাবে না।
বড় কথা হচ্ছে, বহু ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছি। বিজয়ের দিনে চারদিকে উল্লাস চলছিল। আবার যারা আপনজন হারিয়েছে, তাদের হাহাকার ছিল।
বিজয়ের আনন্দে মানুষ সেদিন ঢাকার রাস্তায় নেমে এসেছিল। যে যেভাবে পেরেছে আনন্দ প্রকাশ করেছে। একটি দেশ পাওয়ার জন্য যে চাওয়া ছিল, সেটা তো সেদিনই পূর্ণতা পায়।