ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

জাগরণ চাকমা
জাগরণ চাকমা
11 August 2024, 08:36 AM
UPDATED 11 August 2024, 14:44 PM

টানা গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে গতকাল পুরোদমে তৈরি পোশাক ও অন্যান্য কারখানা শুরু হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে কলকারখানা থেকে দেশের অন্যান্য জায়গায় পণ্য পরিবহন এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি।

গত তিন সপ্তাহের লোকসানের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছেন।

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকন মেডিকেয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কারখানা পুরোদমে চালু থাকলেও বিক্রি অনেক কম। রোগীরা আতঙ্কে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।'

তিনি দুঃখ করে বলেন, 'অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে গত তিন সপ্তাহে কোনো বিক্রি হয়নি। বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করতে পারছি না।'

'পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়িক কাজে গতি আসবে না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য খাতও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'

গত তিন সপ্তাহে দেশে সহিংসতা ও ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। গত ৭ আগস্ট পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫৫১ জনেরও বেশি। তাদের মধ্যে সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও আছেন।

গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ছেড়ে চলে যান শেখ হাসিনা।

এরপর অনেক সহিংসতা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ইলেক্ট্রোমার্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার থেকে কারখানা শুরু হয়েছে।'

তিনি সরকারকে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে গ্রাহকের আস্থা ফিরে।

গত বৃহস্পতিবার সারাদেশে তাদের ৫৫টি শোরুম খুলেছে। কিন্তু গত তিন দিনে কোনো ক্রেতা আসেননি বলেও জানান তিনি।

নিজস্ব শোরুম ছাড়াও দেশে তাদের এক হাজারের বেশি ডিলার আছে। কেউই বিক্রির সংবাদ দেননি।

নুরুল আফসারের মতে, এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ টাকা খরচ করতে চান না। তাই বিক্রি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, 'অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ব্যবসা ও রাজনীতিকে আলাদা রাখতে হবে।'

একটি শীর্ষ ইস্পাত প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তাদের কারখানা পুরোদমে চলছে। সরবরাহ শুরু হয়েছে সীমিত আকারে।

তার ভাষ্য, গত তিন সপ্তাহে ইস্পাতখাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কয়েকদিন তাদের কোনো বিক্রি ছিল না। কিন্তু, ইউটিলিটি চার্জ, বেতন ও ঋণের সুদের খরচ মেটাতে হয়েছে।

'এই ক্ষতি থেকে আমরা কীভাবে বেরিয়ে আসব?'—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, 'লোকসান পুষিয়ে নিতে বিনিয়োগকারীদের অনেক সময় লাগবে। দীর্ঘদিন পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব।'

এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের কারখানা শুরু হলেও কাজ পুরোদমে শুরু হননি। বলেন, 'পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করব।

তবে তাদের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে ব্যবসা আংশিক শুরু হয়েছে।

জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্পোর্টসওয়্যার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডিবিএল লাইফস্টাইলের হেড অব বিজনেস অপারেশনস রেজওয়ান হাবিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডিতে আউটলেট খোলা। ক্রেতার সংখ্যা কম।'

'শিগগিরই ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'মানুষ এখনো স্বস্তিতে নেই। কেনাকাটায় তাদের আগ্রহ কম।'