অনুমতি মেলেনি ভারতের, বুড়িমারীতে আটকা ভুটানের ট্রানশিপমেন্ট পণ্য
বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের ভেতর দিয়ে ভুটানে ট্রানশিপমেন্ট পণ্য পাঠানোর 'ট্রানজিট ক্লিয়ারেন্স' দেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ফলে থাইল্যান্ড থেকে জাহাজে আসা ভুটানের পরীক্ষামূলক ট্রানশিপমেন্ট পণ্যবাহী কনটেইনারটি লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরে আটকে আছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর ও কাস্টমস সূত্র জানায়, থাইল্যান্ডের ব্যাংককের আবিত ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড গত ৮ সেপ্টেম্বর ভুটানের এক আমদানিকারকের উদ্দেশে ছয় ধরনের পণ্য—ফলের জুস, জেলি, শুকনো ফল, লিচু ফ্লেভারের ক্যান্ডি ও শ্যাম্পুসহ একটি কনটেইনার পাঠায়।
ল্যাম চ্যাবাং বন্দর থেকে ছাড়ানো এ চালানটি ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পৌঁছায়। এরপর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক প্রটোকল অনুযায়ী কনটেইনারটি বাংলাদেশ–ভারত–ভুটান রুটে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে রুট ক্লিয়ারেন্সের না পাওয়ায় বুড়িমারী থেকে আর এগোতে পারেনি চালানটি।
এর আগে, ২০২৩ সালের ২২ মার্চ বাংলাদেশ ও ভুটান ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা সংক্রান্ত একটি প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর এক বছর পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে ভুটানে আয়োজিত বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও সড়কপথ এবং ভারতের সড়কপথ ব্যবহার করে ভুটানে দুটি পরীক্ষামূলক ট্রানশিপমেন্ট চালান পাঠানো হবে।
সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো পণ্যের প্রথম কনটেইনারটি এনএম ট্রেডিং করপোরেশন গত ২৮ নভেম্বর বিকেল ৪টায় বুড়িমারীতে আনে। তবে ২৮ ও ২৯ নভেম্বর বেনকো লিমিটেড কয়েক দফা চেষ্টা করেও ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে কনটেইনারটি প্রবেশ করাতে ব্যর্থ হয়।
সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না ভারত শেষ পর্যন্ত অনুমতি দেবে কিনা।
বুড়িমারী স্থলবন্দর–সংযুক্ত একটি সূত্র জানায়, চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর এখনো ভুটানগামী এ ট্রানশিপমেন্ট চালানের জন্য প্রয়োজনীয় 'অনুমোদন নোট' পায়নি। ফলে বুড়িমারীর ইয়ার্ডে ট্রাকসহ কনটেইনারটি আটকে আছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও বেনকো লিমিটেডের মালিক ফারুক হোসেন জানান, 'চট্টগ্রাম থেকে আসা ভুটানের পরীক্ষামূলক ট্রানশিপমেন্ট চালানটি বুড়িমারীতে আছে। ভারত এখনো অনুমতি দেয়নি, তাই পাঠানো যাচ্ছে না। অনুমতি পেলেই আমরা পাঠিয়ে দেব।'
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মাহমুদুল হাসান জানান, '২৮ নভেম্বর থেকে কনটেইনারটি বন্দরের মাঠে আছে। ভারতের অনুমতি না আসায় এখানেই অবস্থান করছে। ভারতের অনুমতি পাওয়া গেলে কনটেইনারটি ভুটানে পাঠানো হবে।'
বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনের সহকারী পরিচালক (এসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'ভুটানের চালানের সব কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ভারতীয় কাস্টমস অনুমতি দিলেই আমরা কনটেইনারটি ভুটানের উদ্দেশে পাঠাতে পারব।'
স্থানীয় বন্দরকর্মী, পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ভুটানের ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। প্রথম পরীক্ষামূলক চালানটি আটকে যাওয়ায় এ অঞ্চলের সম্ভাব্য বাণিজ্যচক্রও অচল হয়ে আছে।
তাদের দাবি, ভারত দ্রুত রুট ক্লিয়ারেন্স দিলে তিন দেশের বাণিজ্য সংযোগ নতুন গতি পাবে।