চতুর্দশ শতাব্দীর ভয়াবহ ব্ল্যাক ডেথের উৎপত্তি হয় মধ্য এশিয়ায়
চতুর্দশ শতকের ১৩৪৬ থেকে ১৩৫৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় ভয়ংকর এক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। যাবে বলা হতো ব্ল্যাক ডেথ। সে সময় রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে কয়েক লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
তবে, সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপেরও প্রায় এক দশক আগে রোগটি মধ্য এশিয়ায় উৎপত্তি লাভ করে। তখনকার দিনে মনে করা হতো, রোগটি দূষিত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।
'জার্ম থিওরি' বা জীবাণু তত্ত্ব আবিষ্কারের আগে চিকিৎসাবিদ্যায় একে বলা হতো 'মিয়াজমা তত্ত্ব'। প্রাচীন গ্রিক ভাষায় 'মিয়াজমা' শব্দের অর্থ ছিল দূষণ বা খারাপ বাতাস। ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে জানা যায়, প্লেগের জন্য দায়ী জীবাণুটি ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। মাছি, উকুন কিংবা ইঁদুরের মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়।
এ রোগে সংক্রমিত মাছির কামড়ে ব্যাকটেরিয়া রক্তের মাধ্যমে শরীরের লিম্ফ নোডে জমা হতে থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের শরীরের লিম্ফ নোডগুলো দৃশ্যমান থাকে না। কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে লিম্ফ নোডগুলো ফুলতে থাকে, যে অবস্থাকে বলা হয় 'বুবোস'। এ কারণে এই প্লেগকে বুবোনিক প্লেগ বলা হয়। আরও দুই ধরনের প্লেগ হচ্ছে নিউমোনিক প্লেগ এবং সেপটিসেমিক প্লেগ।
শুরুর দিকে মাথাব্যথা, জ্বর, অত্যাধিক দুর্বলতা এসব লক্ষণ দেখা যায়। বমি বমি ভাব এবং সারা শরীরে ব্যথাও হয়। যখন ব্যাকটেরিয়া লিম্ফ নোডে পৌঁছায়, তখন লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যাওয়ার কারণে খুব যন্ত্রণা হয়। কামড়ের স্থানের কাছাকাছি যে লিম্ফ নোডগুলো থাকে, সেগুলো আগে ফুলে যায়। সাধারণত উরু, কনুইয়ের পেছনের অংশ ও কাঁধ এসব স্থানই বেশি আক্রান্ত হয়। কখনো কখনো এগুলো ফুলে ডিমের আকার ধারণ করতো। অত্যন্ত ব্যথায় কামড়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই মানুষ মারা যেত।
সাম্প্রতিকালে জার্মানির এবারহার্ড কার্লস ইউনিভার্সিটি অব টুবিনজেনের প্রত্নতত্ত্ববিদ মারিয়া স্পাইরো একটি গবেষণায় দেখতে পান, ১৩৪৮ এবং ১৩৩৯ সালে মানুষ হত্যাকারী বিধ্বংসী এই প্লেগ রোগ সৃষ্টিকারী ইয়ারসিনিয়া বা ওয়াই পেস্টিস ব্যাকটেরিয়ার ৪টি স্ট্রেইনের মধ্যে একটি স্ট্রেইনের উপস্থিতি ছিল অনেক আগে থেকে।
স্পাইরো ও তার দল মধ্য এশিয়ার একটি প্রাচীন কবরস্থানে ওই ২ বছরে অনির্দিষ্ট 'মহামারিতে' আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী কয়েকজনের দাঁতে ওয়াই পেস্টিস ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। এরপর বর্তমানের প্লেগ রোগের সঙ্গে সেটির জেনেটিক উপাদান তুলনা করে ওয়াই পেস্টিসের প্রাথমিক স্ট্রেইন সম্পর্কে নিশ্চিত হন। যা ১৮০০ দশকের শুরুর দিকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
গবেষকদের মতে, মধ্য এশিয়ায় বসবাসকারী মারমোটসহ অন্যান্য প্রজাতির ইঁদুরের মধ্যে ওয়াই পেস্টিস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি এখনো বিদ্যমান। এটির স্ট্রেইনের সঙ্গে ১৩৩৮ এবং ১৩৩৯ সালের প্লেগের স্ট্রেইনের মিল পাওয়া গেছে।
১৩০০ দশকের শুরুর দিকের প্লেগের কারণ সম্পর্কে অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, ৭ হাজার বছর আগে পূর্ব ইউরোপে মাছির মাধ্যমে মানুষ প্লেগ রোগে সংক্রমিত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: সায়েন্স নিউজ, ন্যাচার
গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া