স্মার্ট ফোনের যুগে যে কারণে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ফিচার ফোনের

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
14 May 2023, 06:19 AM
UPDATED 18 May 2023, 01:32 AM

স্মার্ট ফোনের এই যুগে সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে নতুন করে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে 'ফিচার ফোন' বা বাটনওয়ালা ফোন। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাজার দখল করে আছে স্মার্টফোন, ঠিক সে সময় এসে অনেক ক্রেতাই– বিশেষত তরুণ প্রজন্ম তথা জেন-জি'র সদস্যরা মুঠোফোনের অতি ব্যবহার এড়াতে অপেক্ষাকৃত সহজ এই ফোনের দিকে ঝুঁকছে। 

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন বিক্রির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিক্রয় হ্রাসের হিসাব অনুযায়ী ২০২২ সালে স্মার্টফোন বিক্রির হার পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে শতকরা প্রায় ২০ ভাগ কমেছে। 

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ অনুযায়ী, বাংলাদেশেও ২০২২ সালে স্মার্টফোনের আমদানি শতকরা সাড়ে ২৩ ভাগ কমেছে। এই নতুন ঝোঁকের পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে স্মার্টফোনের চাহিদা হ্রাস, এসব ডিভাইসের মূল্য বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি অন্যতম। 

এ কথা স্পষ্ট যে, অনেক ক্রেতাই এখন স্মার্ট ফোনের বিকল্প খুঁজছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিকল্প হচ্ছে ফিচার ফোন। আকারে ছোট এবং স্মার্টফোনের চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়া যায় এসব ফোন। এতে টেক্সটিং, কলিং ইত্যাদি মৌলিক কাজের সঙ্গে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের সুযোগও রয়েছে। ব্যাটারির দীর্ঘায়ুর জন্যেও এসব ফোন পরিচিত। একবার চার্জ দিয়ে কয়েকদিন, এমনকি সপ্তাহও পার করে দেওয়া যায় এসব ফোনে। 

তবে হঠাৎ করে আবার কেন ফিচার ফোন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে? এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, মানুষ এখন স্মার্টফোন আসক্তির নেতিবাচক দিক, যেমন— মানসিক উদ্বেগ, বাড়তি চাপ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মতো বিষয়ে ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠছে। ফিচার ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে একটানা নোটিফিকেশন থেকে রক্ষা মেলে। ফোনের পর্দার দিকে তাকিয়ে না থেকে বর্তমান মুহূর্ত উপভোগ করা যায়। 

অনেকের জন্যই এটি একটানা নোটিফিকেশন থেকে মুক্তি পাবার সহজ পদ্ধতি। ফিচার ফোন ব্যবহারের দিকে ঝোঁকার মাধ্যমে তারা একই সঙ্গে বন্ধু-পরিজনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন, আবার সেই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে বারবার ঢুঁ মারার বা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রলোভন থেকেও নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন। এই ঝোঁক শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সীমানাতেই সীমাবদ্ধ নয়। জাপান থেকে শুরু করে ব্রাজিল পর্যন্ত, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফিচার ফোন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। এই বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য কিছু কোম্পানি এখন এসব ফোনের নতুন মডেলও বাজারে ছাড়ছে। আমেরিকান ফিচার ফোন উৎপাদনকারী 'লাইট ফোন' সম্প্রতি জানিয়েছে যে, ২০২০ থেকে ২০২১ তাদের কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ লাভজনক বছর। এই সময়ের মধ্যে তাদের বিক্রয়ের হার শতকরা ১৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রাফিদ সাদমান গত ২ বছর ধরে নোকিয়া ১০৫ মডেলের ফোন ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে তিনি জানান, 'প্রযুক্তি থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন থেকে বর্তমানে মনোযোগ দেবার বিষয়টিকে আমি গুরুত্ব দিই। ফিচার ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে আমাকে বারবার ফোনের নোটিফিকেশনে চোখ দিতে হচ্ছে না। এর পরিবর্তে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ইন্টারনেট ব্যবহারের আগ্রহ ছাড়াই ফোন কল বা টেক্সট ম্যাসেজ পাঠাতে পারছি।'

'এ ছাড়া ফিচার ফোনের ছিমছাম ভাব আর নির্ভরযোগ্যতাও আমার ভালো লাগে। আকারে ছোট, ওজনে হালকা আর স্মার্টফোনের চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। সহজেই সঙ্গে রাখা যায় এবং হারিয়ে যাওয়া বা তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবার আশঙ্কাও থাকে না। ব্যাটারি বেশি সময় ধরে চলে তাই বারবার ফোন চার্জ করার জন্য দুশ্চিন্তাও করতে হচ্ছে না।'

তবে স্মার্টফোনের জায়গা একেবারে দখল করে নেবার মতো সম্ভাবনা অবশ্যই ফিচার ফোনের নেই। জিপিএস নেভিগেশন থেকে শুরু করে মোবাইল ব্যাংকিং পর্যন্ত স্মার্টফোনের এমন অনেক কাজই আছে, যার ওপর আমরা অনেক বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু যারা শুধু যোগাযোগের জন্যই সহজ-ঝুটঝামেলাবিহীন কোনো ডিভাইস খুঁজছেন, তাদের জন্য ফিচার অবশ্যই লোভনীয় বিকল্প। 

প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্রমশ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন এই ঝোঁক কোনদিকে যায়, কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়— তা দেখার বিষয়। আগামী বছরগুলোতে কি আরও অনেক লোকই ফিচার ফোন ব্যবহার করা শুরু করবে, নাকি স্মার্টফোনের আধিপত্য বজায় থাকবে? অন্য অনেক প্রশ্নের মতো, শুধু সময়ই এর উত্তর দিতে পারে। 

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী