একটি জটিল নিলাম তালিকা ও অস্পষ্ট নির্বাচনী মানদণ্ড
গত বছর দেশীয় ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতা বাড়াতে এবং বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে স্থানীয় প্রতিভা তুলে ধরতে ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) টি-টোয়েন্টি সংস্করণ চালু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
চলতি বছর ১২ অক্টোবর দ্বিতীয় আসর শেষ হওয়া পর্যন্ত নতুন কয়েকজন ক্রিকেটারের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্সই প্রমাণ করে লিগটি তার উদ্দেশ্য আংশিক হলেও পূরণ করেছে। কিন্তু বিপিএলের জন্য তৈরি স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিলাম তালিকা, যার নিলাম নির্ধারিত হয়েছে ৩০ নভেম্বর, সেই মূল্যায়নকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
২৬ নভেম্বর ছয়টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ১৬৬ জন স্থানীয় ক্রিকেটারের তালিকা তৈরি করে বিপিএলের ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় দলের নির্বাচক প্যানেল। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, সাম্প্রতিক এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে সেরা পারফর্মারদের অনেকেরই নাম সেখানে নেই।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের অফ-স্পিনার মোহাম্মদ রুবেল সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ। ২৯ বছর বয়সী এই বোলার টুর্নামেন্টে ছিলেন অন্যতম সেরা। আট ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে ৫.২০ ইকোনমিতে তিনি শেষ করেছেন পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হিসেবে। ধারাবাহিকতার পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন টুর্নামেন্টের 'মোস্ট প্রোমিজিং প্লেয়ার' পুরস্কারও। অথচ স্থানীয় খেলোয়াড়দের তালিকায় তার নাম নেই।
'আমি আসলে কিছুই জানি না। কেন তালিকায় নেই, সেটা শুধু নির্বাচকরাই বলতে পারবেন,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন রুবেল।
তিনি আরও বলেন, 'এটা অবশ্যই আমার জন্য কষ্টের। এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে আমি খারাপ বোলিং করিনি। বরং ভালো করেছি, আর আমাকে সেরা সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ও নির্বাচিত করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই ভেবেছিলাম বিপিএলে একটা সুযোগ পেতে পারি, হয়তো কেউ আমাকে দলে নেবে। কিন্তু তালিকাতেই না থাকায় অবশ্যই খারাপ লাগছে।'
রুবেল একা নন। এনসিএল টি-টোয়েন্টির দুই আসরেই ধারাবাহিকভাবে ভালো করা আরও কয়েকজনকেও উপেক্ষা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁহাতি স্পিনার আশরাফুল হাসান রোহান, পেসার আহমেদ শরীফ ও ফাহাদ হোসেন, বরিশালের ব্যাটার ইফতেখার রহমান ইফতি, বাঁহাতি রিস্ট-স্পিনার নুহায়েল সানদীদ ও লেগ-স্পিনার সাধিন ইসলাম অন্যতম। এদের অনেকেই সম্প্রতি বাংলাদেশ 'এ' দল বা হাই পারফরম্যান্স ইউনিটেও খেলেছেন।
অন্যদিকে পুরোপুরি বিপরীত চিত্র দেখা গেছে নিলাম তালিকায়। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে গত দেড় বছর দেখা না গেলেও বরিশালের মনির হোসেন খান ও রংপুরের সঞ্জিত সাহা দিপের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এমনকি তিন বছর ধরে মাঠের বাইরে থাকা শাহরিয়ার আলম মহিমকেও রাখা হয়েছে তালিকায়।
কেবল নির্বাচন নয়, খেলোয়াড়দের ছয় স্তরের বেতনশ্রেণিতে ভাগ করাটিও প্রশ্ন তুলছে। বেতনসীমা ধরা হয়েছে ১১ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
নিয়মিত জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে না থাকলেও মোহাম্মদ নাঈমকে রাখা হয়েছে 'এ' ক্যাটাগরিতে। বিপরীতে তাওহিদ হৃদয়, পারভেজ হোসেন ইমন, নাসুম আহমেদ ও জাকের আলি অনিক যারা বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একাদশে খেলেছেন, তাদের রাখা হয়েছে 'বি' ক্যাটাগরিতে।
এদিকে প্রতিশ্রুতিবান পেসার নাহিদ রানা জায়গা পেয়েছেন 'সি' ক্যাটাগরিতে, যেখানে আছেন প্রতিষ্ঠিত টেস্ট ক্রিকেটার মুমিনুল হক, সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারসে দারুণ পারফর্ম করা হাবিবুর রহমান সোহান এবং টপ এন্ড টি-টোয়েন্টিতে দৃষ্টি কাড়া জিসান আলমকে রাখা হয়েছে 'ডি' ক্যাটাগরিতে।
যদিও তালিকায় নতুন সংযোজনের জন্য নির্বাচকদের হাতে এখনো দুই দিন সময় আছে, তবুও প্রাথমিক তালিকাটিই প্রশ্ন তোলে, খেলোয়াড়রা কি সত্যিই যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হচ্ছেন, নাকি কেবল আনুষ্ঠানিকতা সারতেই তালিকা করা হয়েছে, যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়াই?