শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি রাখার উদ্যোগ নেব: অমর্ত্য

আবু তালহা
আবু তালহা
6 September 2025, 05:14 AM
UPDATED 6 September 2025, 21:04 PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে জয়ী হলে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সহপাঠীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বামপন্থী সংগঠন সমর্থিত 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী অমর্ত্য রায়।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা জানান।

তিনি বলেন, 'আমরা বেশি কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছি। জাহাঙ্গীরনগরকে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সেসব সমস্যার সমাধান দরকার। যে ভিত তৈরির জন্য আমরা নিজেদের উপযুক্ত মনে করছি।'

জুলাই অভ্যুত্থানসহ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সব আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে ছাত্র সংগঠনটির সাবেক এই সভাপতি বলেন, আমাদের প্যানেলে সম্প্রীতির ঐক্য হয়েছে, বিভিন্ন মত-পথের মানুষ একত্রিত হয়েছে। এটাই আমাদের শক্তি।

'আমরা মজা করে বলি, বাম হলো সাক্ষী গোপাল। ক্যাম্পাসে ছাত্রদল থাকলে ছাত্রলীগ থাকে না—ছাত্রলীগ থাকলে ছাত্রদল থাকে না। শিবির ছিল না বহুদিন। কিন্তু বাম ছাত্র সংগঠনগুলোকে তার মতো করে টিকে থেকেছে এবং শিক্ষার্থীকেন্দ্রীক কার্যক্রমেও অনেকটাই এগিয়ে।'

নির্বাচিত হলে কী কী করবেন জানতে চাইলে অমর্ত্য বলেন, প্রধান সমস্যা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিপথ ঠিক নেই—জাহাঙ্গীরনগর গবেষণামুখী নাকি চাকরিনির্ভর সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে নেই। আমাদের চাকরির জন্য যোগ্য-দক্ষ করে গড়ে তুলছে না, আবার গবেষণার বরাদ্দ সংকট। আমাদের চেষ্টা থাকবে গবেষণাগার ও বরাদ্দ যেন বাড়ে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় হয়।

'আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো পদগুলো চালু হোক। শিক্ষার্থীদের এখন টিউশন দিয়ে বা নানাভাবে ইনকামের জায়গা বের করতে হয়। এতে তাদের সময় নষ্ট হয়।'

এর বাইরে বিদ্যমান অবকাঠামোগত সমস্যা তো রয়েছেই। এসব সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে সিন্ডিকেটে ছাত্র প্রতিনিধি রাখার উদ্যোগ আমরা নেব। জাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, বলেন তিনি।

অমর্ত্য আরও বলেন, আমাদের একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান নাই। একাডেমিক ক্যালেন্ডার ঠিক থাকে না। একজন শিক্ষার্থীকে যেন সকালে এসে জানতে না হয় যে, তার ক্লাসটা ক্যানসেল হয়ে গেছে—সেই উদ্যোগ আমরা নেব।

সাংস্কৃতিক চর্চায় জোর দেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'জাহাঙ্গীরনগরকে আমরা সাংস্কৃতিক রাজধানী বলি। গত বছরের ৫ আগস্টের পরে আমরা দেখলাম এখানে ৩৫ বছর পর শিবির (বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির) এলো এবং আরও অন্যান্যভাবে এখানকার কালচারাল পরিবেশটা গুমোট হয়ে গেল।'

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই প্রার্থী। তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন। বিশেষত জুলাই অভ্যুত্থানের পরে। 'টাকার বিনিময়ে ভোট কেনা সম্ভব বলে আমরা মনে করি না। ৫ আগস্ট আরও শিক্ষা দিয়েছে, সন্ত্রাস-আধিপত্যের রাজনীতি যারা করবে, তারা ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হবে।'

জাতীয় রাজনীতিতে সংস্কারপন্থী বাম ঘরানার দলগুলোর আশানুরূপ অংশীদারত্ব না থাকার প্রভাব চ্যালেঞ্জ মনে না করেন না অমর্ত্য। 'কারণ, জাহাঙ্গীরনগরে একাত্তর, নব্বই, চব্বিশের যে ন্যারেটিভ, সেই বিতর্কে এখানকার বামপন্থীরা একটু কমই যায়। শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সমস্যা ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষাই বেশি গুরুত্ব পায়,' বলেন তিনি।

অমর্ত্য বলেন, 'গত ৩৩ বছর জাকসু নির্বাচন না হওয়ার কারণ ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব। মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত শিক্ষকদের উদ্দেশ্য থাকবে তার সমর্থিত দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা; বিজয় নিশ্চিত বুঝলেই কেবল নির্বাচন চাইবো—এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে আমাদের আশঙ্কার জায়গা আছে।'