একগুচ্ছ নালিশ নিয়ে ইসির কাছে জামায়াত, চায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড

By স্টার অনলাইন রিপোর্ট
8 December 2025, 11:27 AM
UPDATED 8 December 2025, 17:46 PM

একই দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে দেশে আইনশৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি দেখছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এমন পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সিরিয়াস না হলে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে সে প্রশ্ন তুলেছেন জামায়াত নেতারা। আগামী নির্বাচনে 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' চান তারা।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে (সিইসি) এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এর আগে সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেড়ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছে দলটির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

গোলাম পরওয়ার বলেন, 'মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি আমরা দেখছি। একটা দলের সভায় অন্য দলের হামলা হচ্ছে। এমনকি নারীরাও তাদের ভোটের কাজে, সমাবেশে, গণসংযোগে গিয়ে নির্যাতিত ও হামলার শিকার হচ্ছেন, আহত হচ্ছেন। এসব পরিস্থিতি নিয়েই আমরা মূলত নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, এখনই সিরিয়াস না হলে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে?'

তিনি বলেন, 'আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে—কোনো কোনো বিষয়ে কিছু ইনফরমেশন গ্যাপ, কিছু অস্পষ্ট অবস্থা—এগুলো পরিষ্কার করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমরা আজ মিলিত হয়েছিলাম এবং সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তার মধ্যে একেবারেই প্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যেটার জন্য ১৮ কোটি দেশবাসী নতুন গণতন্ত্রের অভিযাত্রার জন্য অপেক্ষা করছে সেটা হচ্ছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা। এটার জন্য জাতি অপেক্ষা করছে।'

গোলাম পরওয়ার বলেন, 'নির্বাচনের ঘোষিত যে টাইমলাইন, আসন্ন রমজানের পূর্বেই নির্বাচন করার ব্যাপারে জাতির কাছে সরকার ও রাজনৈতিক দলের আমরা যারা কমিটেড, সেখানে নির্দিষ্ট তফসিল ঘোষণার সময়টা একেবারেই পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট ঘোষণা ও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত জানার জন্যই মূলত প্রথম আলোচনায় আজকে ইস্যুটাকে তুলেছি।'

তিনি বলেন, 'এরপরে আলোচনায় ছিল ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিজিবি, সেনাবাহিনী মোতায়েন ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ। মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা—যেটাকে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলছি—প্রশাসনের কর্মরত বড় বড় কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেটা আলোচনার বিষয় ছিল।'

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে জামায়াত খুব 'ইফেক্টিভ' দেখছে উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, 'একটা অভিযান নামে চলছে। কিন্তু, কার্যকরভাবে এটাকে ফলপ্রসূ করা এবং ৫ আগস্টের পর থেকে সারাদেশের থানাগুলো থেকে লুটপাট হওয়া অস্ত্রের কী পরিমাণ উদ্ধার হলো; অবৈধ অস্ত্রধারীরা যারা নির্বাচন ডিস্টার্ব করতে পারে, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে পারে, তাদের গ্রেপ্তার অভিযানের ব্যাপারে আমাদের আলোচনা ছিল।'

তিনি বলেন, 'প্রবাসীদের ভোটার রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটা অনেকে জটিল মনে করছে। এনআইডি, পাসপোর্ট, কোনো কোনো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস না হলে এটা হতে পারছে না। এটা আরও সহজ করার আহ্বান জানাই আমরা।'

ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর দাবিও জানিয়েছেন উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসি তাদের কথা দিয়েছে, সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে তারা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার চেষ্টা করবেন এবং এই সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে গোলাম পরওয়ার বলেন, 'উনারা নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পারেননি। তারা যে পারেননি সেটা বিদ্যমান অবস্থার কিছু তথ্যপ্রমাণ স্পেসিফিকলি ইসির সামনে তুলে ধরেছি। এই অবস্থা থাকলে এটাকে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হিসেবে গ্রহণ করব না।'

তিনি বলেন, 'তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের কাছে সব এখতিয়ার চলে আসবে। প্রশাসনকে যথাযথভাবে নিরপেক্ষ রাখা প্রয়োজনের রদবদল করা—এখন তো একটা প্রশাসনিক রদবদল হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর কোনো কর্মকর্তা খুব নগ্নভাবে নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করলে ইসির নজরে তা আনা হলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন।'

ইসি বেসরকারি ব্যাংক থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম পরওয়ার বলেন, 'অনেকে নানা ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে কথা বলেছেন। কোনো দলের কোনো ব্যাংক হয় না। দলের মালিকানায় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকে না। কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আছে, এই ধরনের কোনো কর্মকর্তা যে নিয়োগ দেবেন না ইসি এই কথা দিয়েছেন।'