ট্রাম্পকে ‘এক হাত নিতে পারেন’ এমন নেতা চান নিউইয়র্কবাসী

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
2 November 2025, 10:18 AM

আর মাত্র দুই দিন বাকি। আগামী ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ঘটতে যাচ্ছে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। সেই নগরীর মেয়র নির্বাচনে এগিয়ে থাকা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি বিজয়ী হলে দেশটির ইতিহাস এক নতুন অধ্যায়ে গড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাদের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক নগরীর সম্ভাব্য মেয়রকে 'কমিউনিস্ট' হিসেবে নিন্দা করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির সম্ভাব্য বিজয় নিয়েও বিরক্ত ট্রাম্প।

আজ রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্কবাসী তাদের নগরীর জন্য হয়ত নতুন নেতা বেছে নেবেন, যিনি ট্রাম্পকে 'এক হাত' নিতে পারবেন।

মাত্র এক বছর আগেও জোহরান মামদানিকে নিউইয়র্কের তেমন কেউই চিনতেন না, এখন তার নাম বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের বাজেট ১১৬ বিলিয়ন ডলার। এটি বিশ্ব অর্থব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্রও বটে। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বিনা ভাড়ায় বাস ও বাড়ি ভাড়া বাড়তে না দেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের নিখরচায় স্বাস্থ্যসেবার কথা বলা হয়েছে।

এমন প্রতিশ্রুতিতে নিউইয়র্ক নগরীর স্বল্প আয়ের মানুষেরা খুশি হলেও নাখোশ নগরীর শীর্ষ ধনীরা। কেননা, জোহরান মামদানি ধনকুবেরদের করের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। এতে শুধু ধনকুবেররাই নন, তাদের রক্ষাকর্তা রাজনীতিক নেতারাও আতঙ্কিত।

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিউইয়র্কের বাড়ি ভাড়া এত বেশি যে কম আয়ের মানুষেরা সেখানে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারি বাড়ি ভাড়া না বাড়ানোর বিষয়ে জোহরান মামদানির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নগরবাসীর ভেতর ভীষণ আবেদন সৃষ্টি করেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বিনামূল্যের স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ সেবা।

জোহরান মামদানির এমন সমাজসেবামূলক প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, 'আমি কোনো কমিউনিস্টকে অর্থ নষ্ট করার সুযোগ দেবো না।' রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে জোহরান মামদানির ক্ষতি হওয়ার চেয়ে বরং সুবিধাই হচ্ছে বেশি।

নিউইয়র্ক নগরীর ভোটারদের প্রায় ৬৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত। তাই সেখানে রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্পবিরোধী মনোভাব বেশি। এমন পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কবাসী হয়ত জোহরান মামদানিকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করতে পছন্দ করবেন।

জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তার বিবরণ দিতে গিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই ডেমোক্র্যাট নেতা জনসংযোগে পথে নামলে জনতার ভিড় লেগে যায়। একটু এগিয়ে গেলেই তার পথ আটকে যায় উৎসাহীদের জন্য। কেউ এগিয়ে আসেন করমর্দন করতে। কেউ আসেন সেলফি তুলতে। কেউ এসে উৎসাহ দিয়ে বলেন, 'আছি তোমার সঙ্গে।'

মূলত কর্মজীবী মানুষের কথা বলায় জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তা এখন বাকি দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় বেশি। ফক্স নিউজের দৃষ্টিতে জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তা এখন প্রায় ৫০ শতাংশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অপর নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমার প্রতি সমর্থন ২৫ শতাংশ। 

এ ছাড়াও, রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী কার্টিজ স্লিওয়ার প্রতি জনসমর্থন প্রায় ২১ শতাংশ।

জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারণায় এই দুই প্রার্থীর মূল কথা—জোহরান মামদানি ব্যবসায়ীবিরোধী, মুসলিম ও নিউইয়র্কের মতো সুবিশাল নগরীর দায়িত্ব পালনে মোটেও উপযুক্ত নন। এ ছাড়াও, বিপুল সংখ্যক ইহুদিদের বসবাস যে নগরীতে, সেখানে তিনি গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এসবই এখন জোহরান মামদানির জন্য 'আশীর্বাদ' হয়ে উঠছে। কেননা, নিউইয়র্কবাসী এমন নেতা চান যিনি তাদের জন্য কথা বলবেন, এমনকি তা যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গিয়েও হয়।

তবে জোহরান মামদানির বিরোধীরাও বসে নেই। তারা তাকে হারানোর জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঢালছেন ভোটারদের মনোভাব পাল্টাতে। সম্প্রতি নিউইয়র্কের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র ধনকুবের মাইকেল আর ব্লুমবার্গ দেড় মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন জোহরান মামদানির প্রধান বিরোধী অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিজয়ের আশায়।

তবে শেষ হাসি কে হাসবেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও দুইদিন।