চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: বাবার সন্দেহেই ধরা পড়লেন ছেলে

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
13 September 2025, 16:18 PM
UPDATED 14 September 2025, 11:49 AM

রক্ষণশীল রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যে প্রায় ৩০ ঘণ্টার নাটকীয় অভিযান শেষে সন্দেহভাজন হামলাকারী টাইলার রবিনসনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

সিএনএন বলছে, বাবার সন্দেহ ও পারিবারিক এক বন্ধুর সহায়তায় ২২ বছর বয়সী এই যুবককে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টাইলারই এ হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত।

প্রকাশ্যে হত্যা

গত বুধবার ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে চার্লি কার্কের অংশগ্রহণে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ঠিক তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের ছাদ থেকে এক বন্দুকধারী স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি চালান, যা কার্কের গলায় বিদ্ধ হয়। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

তদন্ত ও প্রাথমিক তথ্য

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ছাদে উঠে পোশাক বদলে একটি কালো টি-শার্ট পরেন, যার ওপর আমেরিকান পতাকা ও ঈগলের প্রতীক ছিল। পরে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে তিনি পাশের বনাঞ্চলে পালিয়ে যান। পুলিশ ছাদে হাতের ছাপ, জুতার ছাপ ও পোশাকের কিছু অংশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় এফবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্তত ২০টি সংস্থা একযোগে তদন্ত শুরু করে। তথ্যদাতার জন্য ঘোষণা করা হয় ১ লাখ ডলারের পুরস্কার। তবু সন্দেহভাজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পেরে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ জানিয়েছিল, 'আমরা জানি না অপরাধী কোথায়।'

charlie_kirk.jpg
চার্লি কার্ক। ছবি: রয়টার্স

বাবার সন্দেহেই খুলে যায় রহস্যের জট

ঘটনার মোড় ঘুরে যায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। টাইলারের বাবা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও দেখে সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, ফুটেজের ব্যক্তি তার ছেলে টাইলার। তিনি সরাসরি ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেন, 'টাইলার, এটা কি তুমি?'

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে টাইলার স্বীকার করেছেন, তিনিই গুলি চালিয়েছেন। আত্মসমর্পণের কথা বললে তিনি পাল্টা উত্তর দেন, 'নিজেকে মেরে ফেলব, কিন্তু ধরা দেবো না।'

পরিস্থিতি বুঝে তার বাবা একজন পরিচিত তরুণ যাজকের সাহায্য নেন, যিনি স্থানীয় শেরিফ অফিস ও ইউএস মার্শালের সঙ্গে কাজ করেন। সেই সূত্রে যোগাযোগ হয় ওয়াশিংটন কাউন্টি শেরিফ অফিসের সঙ্গে। এরপর তথ্যটি পৌঁছায় মূল তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই ও ইউটাহ কাউন্টি কর্তৃপক্ষের হাতে।

গ্রেপ্তার ও উদ্ধার

তথ্য পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে টাইলার রবিনসনকে। গ্রেপ্তারের সময় তিনি একই রকম পোশাক পরে ছিলেন, যেটি ঘটনার দিন ক্যামেরায় দেখা গিয়েছিল।

পুলিশ একটি বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল উদ্ধার করেছে, যা তোয়ালে দিয়ে মোড়ানো ছিল। তার সঙ্গে পাওয়া গেছে গুলির খোলস, যেখানে খোদাই করে লেখা ছিল, 'হে ফ্যাসিস্ট, ক্যাচ' ও 'ইফ ইউ রিড দিস, ইউ আর গে, এলএমএও'— যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রোগ্রামের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী টাইলার ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের ছোট শহরতলি ওয়াশিংটনে বড় হয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি অধিক রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠেছিলেন বলে জানিয়েছেন তার এক আত্মীয়।

ডিজিটাল বার্তায় ইঙ্গিত

টাইলারের রুমমেট পুলিশের কাছে তার ডিসকর্ড বার্তার স্ক্রিনশট তুলে দেন, যেখানে তিনি রাইফেল 'পিক-আপ' করার কথা বলেছিলেন, পোশাক বদলের কথা জানান এবং রাইফেলটি একটি ঝোঁপে রেখে আসার কথাও উল্লেখ করেন। এসব তথ্য মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

টাইলার রবিনসনের বিরুদ্ধে উগ্র হত্যাকাণ্ড, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

তাকে ইউটাহ কাউন্টি জেলে বিনা জামিনে আটক রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।

ইউটাহ গভর্নর স্পেন্সার কক্স জানিয়েছেন, এই হামলার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হবে— যার মধ্যে মৃত্যুদণ্ডও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।