নদের পানিতেই রান্না হয় ব্রহ্মপুত্রপাড়ের মানুষের

এস দিলীপ রায়
এস দিলীপ রায়
22 March 2023, 07:04 AM
UPDATED 22 March 2023, 13:18 PM

ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে কলস নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন লালভানু বেওয়া (৬৭) ও মরিয়ম বেগম (৬২)। তারা নদের পানিতে গোসলের পর কলসে পানি নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন। এ পানিতেই হবে তাদের ভাত-তরকারি রান্না।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের বুকে চর পার্বতী এলাকার শতাধিক পরিবারের মানুষ লালভানু ও মরিয়মের মতো ব্রহ্মপুত্র থেকে কলসে পানি নিয়ে যান রান্নার জন্য। অবশ্য তারা পানীয় জল নলকূপ থেকে সংগ্রহ করেন।

এ দৃশ্য শুধু চর পার্বতীর নয়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের বুকে অন্যান্য চরেরও। ব্রহ্মপুত্রের বুকে প্রায় ৪০০ চর আছে। প্রত্যেকটি চরে ১০০-৪০০ পরিবারের বাস।

লালভানু বেওয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নলকূপের পানিতে আয়রন থাকায় তা দিয়ে ভাত-তরকারি রান্না করি না। ব্রহ্মপুত্রের পানিতে রান্না করি। নদ থেকে কলসে প্রতিদিন পানি আনতে অনেক কষ্ট হয়। চরে গভীর নলকূপ থাকলে বিশুদ্ধ পানি পেতাম।'

মরিয়ম বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরের সবাই কলসে করে নদের পানি নিয়ে যান। এই পানি দিয়েই রান্না হয়। নলকূপের পানি পান করলেও তা দিয়ে গোসল করি না। নদের পানিতে চরের সবাই গোসল করেন। নলকূপের পানি দিয়ে রান্না করলে ভাত-তরকারি কালো হয়ে যায়। তা খেতে ইচ্ছা করে না।'

পার্শ্ববর্তী চর ভগবতীপুরের আকলিমা বেগম (৪৪) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদের পানিতে গোসল করার পর কলসে (১৫-২০ লিটার) পানি নিয়ে আসি। তা দিয়ে ২ বেলার রান্না করি।'

brhmputrer-paani-diyye-raannaa-2.jpg
চর পার্বতীতে ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি নিতে এসেছেন লালভানু বেওয়া ও মরিয়ম বেগম। ছবি: এস দিলীপ রায় /স্টার

চিলমারী উপজেলার চর শাখাহাতির মনোয়ারা বেগম (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি এনে তা দিয়ে রান্না করি। মাঝেমধ্যে চরের নলকূপের পানি পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সামর্থ্য না থাকায় চরবাসী গভীর নলকূপ বসাতে পারছে না।'

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরাঞ্চলে নলকূপের পানিতে আয়রন সমস্যা দীর্ঘদিনের। সেখানে প্রায় সব নলকূপই অগভীর। যারা নতুন করে গভীর নলকূপ স্থাপন করছেন তারা পরিষ্কার পানি পাচ্ছেন। চরে অধিকাংশ মানুষের সামর্থ্য না থাকায় তারা গভীর নলকূপ স্থাপন করতে পারছেন না। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।'

কুড়িগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে পানির সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন চরে নলকূপের পানিতে আয়রন পাওয়া গেছে। এসব নলকূপ অগভীর স্তরে (৩০-২০০ ফুট) বসানো হয়েছে। পানির স্তর উঠানামা করায় পানি দূষিত হয়েছে।'

'চরে গভীর স্তরে (৫০০ ফুট) নলকূপ স্থাপন করা হলে পরিষ্কার পানি পাওয়া যাবে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে নলকূপের পানিতে আয়রন থাকায় চরের মানুষ ব্রহ্মপুত্রের পানি দিয়ে রান্না করছেন।'

তিনি জানান, চরের মানুষের পানির সমস্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীর পানি ফুটিয়ে রান্না করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ক্ষতিকর হবে না। তবে না ফুটিয়ে পান করলে ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে।'