পূজার দিনগুলোতে মাকে খুব মিস করি: কুমার বিশ্বজিৎ   

শাহ আলম সাজু
শাহ আলম সাজু
26 September 2022, 08:37 AM
UPDATED 26 September 2022, 14:52 PM

এদেশের গানের ভুবনে এক উজ্জ্বল নাম কুমার বিশ্বজিৎ। একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই শিল্পী বিগত বছরগুলোতে ভক্ত-শ্রোতাদের অসংখ্য গান উপহার দিয়েছেন।

তার অনেক গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। গানে গানে ৪০ বছর পার করছেন গুণী এই শিল্পী। চিরসবুজ গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ পূজা নিয়ে তার স্মৃতির কথা জানিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারকে।

তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে পূজার যত আনন্দ এক জীবনে পেয়েছি, তার সবটাই ছেলেবেলায়। ওরকম আনন্দের দিন আর আসবে না। সেই দিনগুলো কেটেছে গ্রামে। পূজা এলেই মায়ের শাড়ি এবং  অন্যদের শাড়ি দিয়ে প্যান্ডেল বানানো হত। ১৫ দিন আগে থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করত। আমরা ১১ মাস অপেক্ষা করতাম কবে শারদীয় দুর্গাপূজা আসবে। কবে আনন্দ করবো।

পূজার সময়ে রাউজান থেকে একজন ঢুলি আসতেন আমাদের পাড়ায় । খুব ভালো ঢোল বাজাতেন। এখনো তার ঢোল বাজানোর দৃশ্য চোখে ভাসে। ঢোল বাজানোর সময় আমি সারাক্ষণ সঙ্গে থাকতাম । কখনো কখনো কাঁসার প্লেট বাজাতাম। ঢোলের প্রতি আমার এমন নেশা দেখে একদিন বাবা বলেছিলেন, তুই কি ঢুলি হবি? একদিন মেরেছিলেন খুব।

kb2.jpg
বনানী ক্লাবে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত

ঢুলি না হলেও শিল্পী জীবনে যা হয়েছি, তাতে করে একজন ঢুলি আমার কাছাকাছি সব সময়ই থাকে। এটাও কম কি? এখন গান করার সময় যখন ঢুলি আমার পাশে থাকে, ফিরে যাই ছেলেবেলার পূজার দিনগুলোতে। কখনো কি ফিরে আসবে দিনগুলো? ভাবি একা একা।

পূজার সময়ে ঢুলির দিকে খুব করে তাকিয়ে থাকতাম। আর ভাবতাম, একজন মানুষ কেমন করে পারে এত সুন্দরভাবে ঢোল বাজাতে? আমি যদি পারতাম! সেজন্যই ঢুলির প্রতি, ঢোল বাজানোর প্রতি আকর্ষণ বাড়ে।

পূজার দিনগুলোর মতো উৎসবের দিন এলেই মার কথা বেশি বেশি মনে পড়ে। মাকে প্রতিদিন মনে করি। কিন্তু পূজার দিনগুলোতে মাকে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। ছেলেবেলায় পূজার সময়ে মা পাঁচন রান্না করতেন। সেই পাঁচনের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। পূজার দিনগুলোতে মাকে খুব মিস করি। ভীষণভাবে মিস করি ।

আরও কত কি রান্না করতেন মা! প্রতি বছর পূজা আসে কিন্তু সেই খাবার আর খাওয়া হয় না। পূজার দিনগুলোতে মাকে প্রণাম করতাম। এখন আর মাকে প্রণাম করা হয় না। এজন্য পূজা এলে খারাপ লাগে মাকে ছাড়া। মাকে মনে পড়ে বেশি করে।

মা যতদিন বেঁচেছিলেন, আমি বাইরে গেলে জেনে নিতেন কখন ফিরবো। বলতাম রাত ১১ বাজবে। তারপর আমি না আসা পর্যন্ত মা জানালার পাশে বসে থাকতেন। রাত ১২টা বাজলেও মা ঘুমাতেন না। জেগে থাকতেন। খেতেনও না। আমি ফিরলেই খেতেন।

kb.jpg
নিজের বাসায় কুমার বিশ্বজিৎ। ফাইল ছবি: স্টার

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মাকে বলে যেতাম। ফেরার পরও মার সঙ্গে দেখা করতাম। এটা আমার বহু বছরের অভ্যাস। এখনও মাঝে মাঝে ঘরে ফিরেই মাকে খুঁজি। তারপর মনে পড়ে, মা তো নেই। মা'র আশীর্বাদ নিয়ে বেঁচে আছি। মা যেখানেই আছেন ভালো থাকুন।

আবারো পূজা আসছে। কিন্তু মা নেই। আমি বিশ্বাস করি, দূর থেকে মা সব দেখছেন।

দূর থেকে মা আশীর্বাদ করছেন।