রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনার বিকল্প ভাবছে সরকার

রেজাউল করিম বায়রন
রেজাউল করিম বায়রন
রেফায়েত উল্লাহ মীরধা
রেফায়েত উল্লাহ মীরধা

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার পর তখনকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানিমুখী খাতগুলোর জন্য সরাসরি নগদ প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে সরকার রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুসারে, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলো রপ্তানি আয়ের ওপর সরাসরি নগদ ভর্তুকি দিতে পারে না।

প্রস্তাবিত উদ্যোগটি রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭ এর খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বুধবার এটি অর্থনীতি সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন পায়।

বিদ্যমান রপ্তানি নীতি আদেশ ২০২৩ এর পরিবর্তে খসড়া নীতিমালা অনুসারে, সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব মাহমুদুল হোসেন খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিগগির নীতিমালার খসড়া মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।

সরকার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেছে। এ থেকে রপ্তানিকারকরা স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে 'ভেঞ্চার ক্যাপিটাল' হিসেবে ঋণ নিতে পারবেন।

পণ্য উন্নয়ন ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য বহুমুখীকরণেও সরকার পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেবে।

গুদামজাতকরণ ও বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনে সহায়তা, বিদেশে বিপণনের জন্য দক্ষতা বাড়ানো ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবস্থা ও বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিলের ওপর সরকার পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ রেয়াত দেবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানে এগুলোর ব্যবহারের ওপর যৌক্তিক খরচ নির্ধারণ করবে। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখবে।

এ ছাড়াও, যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে লাইসেন্সিং ফি ও সব ধরনের শুল্কে ছাড় পাবেন রপ্তানিকারকরা।

রপ্তানি আয়ের দুই থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা সেবা খাতে দেওয়া হবে।

রপ্তানিকারক দেশীয় শিপিং কোম্পানিগুলোর জন্যও দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সংশ্লিষ্ট রপ্তানি উন্নয়নের জন্য সমস্যা ও সুযোগগুলো চিহ্নিত করার জন্য পরিষেবা বিভাগ গঠন করবে।

সরকার বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং, নতুন নতুন বাজার খোঁজা ও শিল্প প্রদর্শনীতে সেবা খাত তুলে ধরতে বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রচারণা চালাবে।

পণ্য ও সেবা খাতের ভার্চুয়াল বাজার উন্নয়নে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে।

খসড়ায় কনসালটেন্সি, সফটওয়্যার ইমপ্লিমেন্টেশন, ডাটা প্রসেসিং, ডাটাবেজড আইটি, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড লিগ্যাল, অ্যাকাউন্টিং, হিসাবরক্ষণ ও আর্কিটেকচারাল, রেন্টাল অ্যান্ড লিজিং সার্ভিসের মতো কম্পিউটার ও সংশ্লিষ্ট সেবাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

খসড়ায় মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, সার্কুলার ইকোনমি, নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা, কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

শাকসবজি ও হস্তশিল্পকে সর্বোচ্চ রপ্তানি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্পিনিং, ডাইং, প্রিন্টিং, ফেব্রিকস ও ফিনিশিংকে 'বিশেষ উন্নয়নশীল খাত' হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

চিকিৎসা সরঞ্জাম ও হস্তশিল্পকে ২০২৪ সালের পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ইপিবির হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তা ছিল চার হাজার ৭৪৭ কোটি ডলার।

আগে বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৭২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার।

লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ বিলিয়ন ডলার আয় ধরা হয়েছিল। এটি গত অর্থবছরের ৫৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের থেকে বেশি। এই বিভাগে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক ৬৭ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের নয় বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১১ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদ্যুৎ ঘাটতি, এলসি খুলতে অসুবিধা ও কাস্টমস থেকে হয়রানির মতো সমস্যাগুলোর কারণে এমনটি হচ্ছে।'