কবি রহমান হেনরীর চাকরিচ্যুতি প্রসঙ্গে যা ভাবছেন কবি সাহিত্যিকরা

ইমরান মাহফুজ
ইমরান মাহফুজ
19 June 2022, 12:26 PM
UPDATED 19 June 2022, 19:14 PM

'কুরুচিপূর্ণ' কবিতা লেখার অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাইদুর রহমানকে। পাঠকদের কাছে তিনি 'রহমান হেনরী' নামে পরিচিত।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই উপপরিচালক সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন কবি সাহিত্যিকের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।

287382191_418876486773434_3913752652741684067_n.jpg
কবি নাসির আহমেদ, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল ও কবি মজিদ মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত


কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, কোনো কবিতাকে 'কুরুচিপূর্ণ' বলার অধিকার কারো নেই। আমিও বলছি না। তবে প্রজ্ঞাপনের আলোকে বলতে পারি শুধুমাত্র কবিতা লেখার অপরাধে যদি কবি রহমান হেনরী বরখাস্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এটি অবশ্যই একটি খারাপ উদাহরণ হয়ে রইলো। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট কিছু বিধিমালা মেনে চলতে হয়, আমরা জানি। কিন্তু সেটি শুধু একপক্ষীয় ব্যাপার তা জানতাম না।

সরকারপ্রধানকে ইঙ্গিত করে "কুরুচিপূর্ণ" কবিতা লেখার "অপরাধে" যদি চাকরিচ্যুত হতে হয়, তাহলে সরকারপ্রধানের প্রশংসা করে "সুরুচিপূর্ণ" কবিতা লিখলেও একই পরিণতি হওয়ার কথা। কেননা, দুটোই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আওতায় পড়ে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কোনোরকম রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিষিদ্ধ। আমরা কিন্তু কখনো উল্টোটা দেখিনি। বরং সরকার প্রধানের প্রশংসা করে তিরস্কৃত হওয়ার বদলে পুরস্কৃত হতেই দেখেছি বারবার।'

কবি মজিদ মাহমুদ বলেন, 'চাকরি যাওয়া কোনো ভালো উদাহরণ হতে পারে না। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাওয়ায় আশঙ্কা থাকে। চাকরি যাওয়া একটি সর্বোচ্চ শাস্তি। এটা লঘু পাপের গুরু দণ্ড কিনা সেটিও ভেবে দেখার বিষয়।'

তিনি আরও বলেন, কবিতা ত কবিতাই। কবিতা কবির নিজস্ব বিষয়। তাতে কোন বাক্য শব্দ কুরুচিপূর্ণ কিনা তা অন্য কারো বলার সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত আমি ঠিক জানি না, কবি রহমান হেনরীর শাস্তি হয়েছে কবিতা লেখার জন্য নাকি শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য। কবিতা একই সঙ্গে আঙ্গিক ও বিষয় নির্ভর, যদি বিষয় দ্বারা চাকরির বিধিমালা ভঙ্গ হয়,  তাহলে সেটি তার বিভাগীয় ব্যাপার। কিন্তু কবিতাতে তো সরাসরি কিছু বলার কথা নয়।

সরাসরি বললে তো কবিতা হওয়ার কথা নয়। কবিতাটি এখনো পড়তে পারিনি। অতএব এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে কবিতা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গেলে সব সরকারই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। ব্রিটিশ সরকার আমলে নজরুলের বই বাজেয়াপ্ত করেছে, জেল-জরিমানা হয়েছে। সরকারি চাকরি করলে হয়তো চাকরিও যেতো। ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ২ বছর কারাদণ্ড হয়েছে।'

কবি নাসির আহমেদ বলেন, 'বাংলাদেশ কেন, যেকোনো দেশে সরকারি চাকরিতে থেকে সরকার নিয়ে কটুক্তি করা যায় কি না, আমার জানা নেই। আর অন্যায় করলে  যে কেউ শাস্তি পাবে। বিএনপি সরকারের আমলে লেখার জন্য প্রখ্যাত সাংবাদিক তোয়াব খানকে জেলে যেতে হয়েছে। আর রহমান হেনরীকে যদি বরখাস্ত করা হয়, তাহলে নিশ্চয় আপিল করার সুযোগও তিনি পাবেন। আমি মনে করি, সরকারি চাকরিতে থেকে প্রধানমন্ত্রীর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে লিখতে আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল। মনে পড়ে কবি রফিক আজাদ সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন কবিতা লেখার জন্য। তিনিও এমন কবিতা লিখতে চাইলে আগে চাকরি ছেড়ে দেওয়া উচিৎ ছিল।'

কবি নির্মলেন্দু গুণকে একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কথা বলতে আগ্রহী না।'

একই প্রশ্নে কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, 'আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তাই কোনো মন্তব্যও করতে চাই না।'