সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছে মিয়ানমার

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
20 April 2022, 15:40 PM

গত মার্চ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার দেশের ৩৩ জন নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে। 

কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিন্নমতাবলম্বী ৩৩ খ্যাতনামা ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগকে সমালোচকরা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন।

এদের মধ্যে আছেন সামরিক শাসকের পক্ষে কাজ করতে অস্বীকার করেছেন এমন কূটনৈতিক, গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর গঠিত ছায়া সরকারের সদস্য, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার তারকা এবং মানবাধিকার কর্মী। জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৩টি আলাদা নোটিশে জানানো হয়েছে, এই ৩৩ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে কারণ তারা 'মিয়ানমারের স্বার্থের পরিপন্থী কাজে অংশ নিয়েছেন।'

অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ২০২০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করলেও সামরিক বাহিনী এই ফল মেনে নেয়নি। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা দেশের ক্ষমতা দখল করে নেয়। ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট দেখা যায়। হাজারো মানুষ প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসেন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রত্যুত্তরে সামরিক বাহিনী সহিংস ও সশস্ত্র হামলা চালায়, ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হয়।

নাগরিকত্ব হারানোদের মধ্যে আছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন। তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের কিছুদিন পর ক্ষমতা হারানো বেসামরিক সরকারের প্রতি তার আনুগত্যের ঘোষণা দেন। জাতিসংঘে এখনও তিনি তার পদ হারাননি। অন্যদিকে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা সামরিক সরকার এখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে সমস্যায় পড়ছে। নাগরিকত্ব হারানো অন্যান্যদের মধ্যে আছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও জার মিন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমার দূতাবাসে নিযুক্ত সেকেন্ড সেক্রেটারি টার মিয়া ই স্যান।

২০২০ এর নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী রাজনীতিবিদরা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) নামে একটি ছায়া সরকার গঠন করেছিল, যার সদস্যরাও এই নীতিমালার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।

এনইউজির মুখপাত্র এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ড. সাসা বলেন, 'আমাদের ক্ষতি করার ও রাষ্ট্রহীন করার উদ্যোগ পুরোপুরি অবৈধ এবং এতে আমি, আমার সহকর্মীরা অথবা মিয়ানমারের সাহসী জনগণ, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে, তারা কেউ নিরুৎসাহিত হবে না। বরং এতে আমরা আরও দৃঢ়সংকল্প হব।'

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা বিষয়ক সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক ইমারলিন জিল বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত 'আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক', এতে কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়তে পারেন।

'যেহেতু দেশটিতে দ্বৈত নাগরিকত্ব বজায় রাখার অনুমতি দেওয়া হয় না, সেক্ষেত্রে বিষয়টি এরকমই হতে যাচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশটিতে বিরাজমান প্রতিহিংসার চর্চার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যায়, যেখানে সামরিক কর্তৃপক্ষ যেকোনো উপায়ে প্রতিপক্ষের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোগগুলো কতখানি নির্দয় বা বেআইনী, সেটা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।

ড. সাসা মন্তব্য করেন, মানুষকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা মিয়ানমারের 'গণহত্যাপ্রবণ' সামরিক বাহিনীর দীর্ঘদিনের কৌশল।

'মিয়ানমারের হাজারো নাগরিক, বিশেষ করে আমাদের রোহিঙ্গা ভাই ও বোনেরা একই নিয়তি বরণ করেছেন। তারা যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানেই রাষ্ট্রহীন অবস্থায় জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছেন', যোগ করেন তিনি।

এনএলডির অনেক সদস্য ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক বাহিনীর সহিংস হামলাকে সমর্থন করেছিলেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এ হামলাকে গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামীদের মধ্যেও অনেকে মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। এমন কী, অং সান সুচিও আন্তর্জাতিক কোর্ট অব জাস্টিসে সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন।

তবে সামরিক বাহিনীর ক্যুর পর এনইউজি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায় এবং রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষা ও মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টির ওপর প্রাধান্য দেয়।