মিয়ানমারকে অস্ত্র সরবরাহ করছে চীন-রাশিয়া-সার্বিয়া: জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার
চীন, রাশিয়া ও সার্বিয়ার দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মিয়ানমারের সামরিক সরকার গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ বলেছেন।
মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে আজ মঙ্গলবার তার জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া এবং সার্বিয়া মিয়ানমারকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। এসব অস্ত্র সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সামরিক জান্তার নৃশংসতার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, রাশিয়া ও চীন মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে অসংখ্য যুদ্ধবিমান, সাঁজোয়া যান দিয়েছে এবং রাশিয়া আরও অস্ত্র দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, 'এই সময়ের মধ্যে সার্বিয়া সরকার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে রকেট ও আর্টিলারি রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে।'
এর আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি যত দ্রুত সম্ভব স্থগিত করতে অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর কাছে আবেদন করেছেন। পাশাপাশি যে অস্ত্র ব্যবহার করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করছে, সেগুলো সরবরাহ বন্ধে আলোচনা ও ভোটের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
অ্যান্ড্রুজ এক বিবৃতিতে বলেন, 'বেসামরিক লোকদের হত্যা করতে ব্যবহৃত অস্ত্র মিয়ানমারকে আর দেওয়া উচিত নয়। বিষয়টি সত্যিই বিবেককে নাড়া দেয়।'
'অস্ত্র সরবরাহে বাধা দিলেই দেশটির সামরিক জান্তার নৃশংসতা বন্ধ করা সম্ভব হবে। বিশ্ব যত দেরি করবে, মিয়ানমারে শিশুসহ নিরীহ মানুষ তত বেশি মারা যাবে,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'মিয়ানমারের জনগণ জাতিসংঘকে এ বিষয়ে কাজ করার অনুরোধ করছে।'
"তারা নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবে একটি আপ-অথবা-ডাউন ভোটের যোগ্য যা তাদের হত্যার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করবে। অনেক পরিবার যুদ্ধের অস্ত্রের আড়াআড়ি চুলে নিজেদের খুঁজে পাচ্ছে যা সদস্য রাষ্ট্রগুলি সরবরাহ করছে। এর অবসান হওয়া উচিত।"
'নৃশংসতায় সহায়তা: মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ' শীর্ষক এই প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার সময় থেকে যে সব দেশ সেখানে অস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে সেগুলোর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছর জুনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ ঠেকাতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রস্তাবটিকে মিয়ানমারের জনগণ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো দ্বারা স্বাগত জানালেও, মিয়ানমারে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চলমান আছে। প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে বলে জানান অ্যান্ড্রুজ।
তিনি বলেন, 'জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র এবং নিরাপত্তা পরিষদকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে জরুরিভাবে কাজ করা দরকার। যদিও নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি, তবে নিরাপত্তা পরিষদও প্রস্তাবটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে মেনে চলতে বাধ্য করতে পারেনি।'