বেতন নেন না যে প্রেসিডেন্ট
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন গত বছরের আগস্টে। এরপর কেটে গেছে ৮ মাস। তবে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রাপ্য বেতন বা ভাতার কানাকড়িও নেননি তিনি।
আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের প্রেসিডেন্ট হাকাইন্দে হিচিলেমা 'জনসাধারণের সেবা করার স্বার্থে' বেতন নেন না।
বিষয়টি স্বীকার করে প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, বেতনের জন্য তিনি এই দায়িত্ব নেননি।
তিনি বলেন, 'বেতনের ইস্যুটি কোনো ইস্যুই না। কারণ, অর্থের জন্য আমরা দায়িত্ব নেইনি। বিষয়টি মোটেই এমন নয় যে সরকার আমাদের বেতন দিতে আগ্রহী না।'
সম্প্রতি আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৯ বছর বয়সী হিচিলেমা একজন অর্থনতিবিদ ও ব্যবসায়ী। তিনি প্রায় ১৫ বছর বিরোধীদলে থাকার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি জানিয়েছে, তার মোট সম্পদের মূল্য প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন ডলার।
দুর্নীতির মূলোৎপাটন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার অঙ্গীকার করে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্টের সরকারি ভবনে না উঠে তিনি ব্যক্তিগত বাসভবনেই বসবাস করছেন।
বেতন না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এটা ঠিক যে আমি এই বিষয়ে (বেতন) মনোযোগ দেইনি। আমার উদ্দেশ্য এবং অনুপ্রেরণা হচ্ছে, কীভাবে আমরা মানুষের জীবন উন্নত করতে পারি।'
তবে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যে হিচিলেমা প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত বাকি সুযোগ-সুবিধাও নিচ্ছেন না।
নির্বাচনের সময় নিজের সম্পত্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন হিচিলেমা। তার বিরোধীদের দাবি, ৯০ এর দশকে রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিতর্কিত বেসরকারিকরণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভাগ্য বদলেছেন তিনি।
জাম্বিয়ার প্যাট্রিয়টস ফর ইকোনমিক প্রোগ্রেস পার্টির নেতা এবং হিচিলেমার কট্টর সমালোচক শন টেম্বো বলেন, হিচিলেমা বেতন না নিয়ে ঠিক কাজটিই করছেন, কারণ 'তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন'।
১৯৬৪ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত জাম্বিয়ার অর্থনীতি তামা রপ্তানির ওপর অতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন তামা উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়িয়ে দিলে এর দাম কমে যায় এবং সমস্যায় পড়ে জাম্বিয়া। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে জাম্বিয়ার অর্থনীতি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সংকুচিত হয়। এরপর তারা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে প্রচুর ঋণ নেয়।
টালমাটাল অর্থনীতির মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিচিলেমার বেতন না নেওয়ার সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগতও জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে লিখেছিলেন, 'এটা সেইসব সাধারণ জাম্বিয়ানদের জন্য অপমানজনক যারা খাবারের জন্য সংগ্রাম করছে। আমি বেতন বাড়ানোর চেয়ে জনগণকে বরং সেই টাকা দিতে চাই।'
জাম্বিয়ার বর্তমান নিয়ম অনুসারে প্রেসিডেন্ট প্রতি মাসে বেতন বাবদ ৪০ হাজার ৬৫৩ কোয়াচা (জাম্বিয়ার মুদ্রা) এবং ভাতা বাবদ ১০ হাজার ৭৮৪ কোয়াচাসহ মোট ৫১ হাজার ৪৩৭ কোয়াচা পেতে পারেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৮ টাকার সমান।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেতন না নিয়ে হিচিলেমা নজির তৈরি করেছেন। তবে এর আগেও আফ্রিকান নেতাদের মধ্যে বেতন কম নেওয়ার উদাহরণ রয়েছে।
২০১৬ সালে তার পূর্বসূরি এদগার লুঙ্গু নিজের বেতনের ৫০ শতাংশ কমিয়েছিলেন এবং এর ৩ বছর পরে দেশের ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য চালু করা সরকারি কঠোর ব্যবস্থাকে সমর্থনের জন্য আরও প্রায় ২০ শতাংশ টাকা কম নিতেন।
এ ছাড়াও আফ্রিকান নেতাদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, ঘানার নানা আকুফো-আডো, মালাবির লাজারাস চাকভেরা এবং কেনিয়ার উহুরু কেনিয়াত্তা নিজেদের বেতন কমিয়েছেন।