ইউক্রেন নিয়ে পুতিন-মাঁখো বৈঠক: আগামী কয়েকটি দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ
ইউক্রেন সংকট নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ইউক্রেনের উত্তেজনা হ্রাসের ক্ষেত্রে আগামী কয়েকটি দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বিবিসি জানায়, ৫ ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে পুতিন নিজেও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।
এর আগে মাখোঁ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী কয়েকটি দিন হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর জন্য ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন হবে যা তারা একসঙ্গেই করবেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন জানান, মাখোঁ যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন তা 'আরও কিছু যৌথ পদক্ষেপের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে', তবে তিনি এও জানিয়েছেন যে, সেগুলো নিয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি।
এদিকে এলিসি প্রাসাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন করে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে না এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। তবে, ক্রেমলিন বলেছে, এই দাবি ঠিক নয়। এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি।
গত কয়েক মাসে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে এমন আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়লেও রাশিয়া এটি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কো থেকে মাখোঁ ইতোমধ্যেই কিয়েভে পৌঁছেছেন এবং সেখানে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপরই বার্লিনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ ও পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
সফরের আগে মাখোঁ বলেছিলেন, তিনি মনে করেন ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য একটা চুক্তিতে পৌঁছানো এখনও সম্ভব এবং রাশিয়া যে তার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এতে অন্যায় কিছুই নেই।
তিনি জানান, ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করা যাবে না।
গত রোবববার মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি সর্বাত্মক অভিযান চালানোর জন্য যতটা দরকার তার ৭০ শতাংশ সামরিক শক্তিই এর মধ্যেই ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করে ফেলেছে রাশিয়া।
অন্যদিকে, মস্কোয় এক চাপা উত্তেজনাপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার আগেরকার হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, 'ইউক্রেন যদি নেটোতে যোগ দেয় এবং ৮ বছর আগে রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়া পুনর্দখলের চেষ্টা করে - তাহলে পুরো ইউরোপ একটা বড় আকারের সংঘাতে জড়িয়ে যাবে।'
ফরাসি রিপোর্টারদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে পুতিন বলেন, 'আপনারা কি চান যে ফ্রান্স রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করুক? তাহলে এটাই হবে। সেই যুদ্ধে কেউ জয়ী হবে না।'
এদিকে, ইউক্রেন সংকট নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দিকে আরও কিছু কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে।
জার্মানি চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও চ্যান্সেলর শোলৎজ সতর্ক করে দেন যে, মস্কো ইউক্রেনে অভিযান চালালে জার্মানিতে গ্যাস পাঠানোর রুশ পাইপলাইন নর্ডস্ট্রিম টু বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
চ্যান্সেলর শোলৎজ ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, 'রাশিয়ার এটা বোঝা দরকার যে এমন অনেক কিছুই ঘটতে পারে যা হয়তো তারা ভেবে দেখেনি।'
প্রেসিডেন্ট বাইডেন হুঁশিয়ারি করে বলেন, 'রাশিয়া ইউক্রেনে ঢুকলে' বিতর্কিত নর্ড স্ট্রিম টু পাইপলাইনটির 'সমাপ্তি ঘটাবে' যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, 'আমি কথা দিচ্ছি যে আমরা এটা করতে পারবো।'
ইউক্রেনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চেক ও স্লোভাকিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ২ দিনব্যাপী বৈঠক চলছে।