বিলম্বিত ফ্লাইটের বিড়ম্বনা কমাতে নতুন প্রযুক্তি

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
10 February 2022, 15:45 PM

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ২ বছরে বিভিন্ন দেশের মধ্যে চলাচলকারী উড়োজাহাজের ফ্লাইটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তবে মহামারি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে কোয়ারেন্টিন ও অন্যান্য বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের জন্য বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ও শিথিল করা হয়েছে।

এ অবস্থায় আবারও সামনে এসেছে পুরনো সমস্যা। নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট না ছেড়ে তা 'বিলম্বিত' হচ্ছে। 

_123110147_digital_id_2.jpg
ছবি: সংগৃহীত

মনে করুন আপনি বিমানবন্দরের বহির্গমন লাউঞ্জে বসে আছেন। হতাশায় আক্রান্ত হয়ে বারবার তাকাচ্ছেন তথ্য প্রদর্শনকারী ডিজিটাল স্ক্রিনে। মিনিটে মিনিটে পেছাচ্ছে ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার সময় আর সঙ্গে আপনার পরবর্তী সংযোগ ফ্লাইট, হোটেল বুকিং কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈঠকে অংশগ্রহণ ঢেকে যাচ্ছে অনিশ্চয়তায়।

দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে যখন আপনার জন্য নির্ধারিত গেটের নম্বর জানতে পারলেন, তখন হয়তো ১৫ মিনিট হেঁটে সেখানে পৌঁছাতে হয়। পৌঁছানোর পরও বেশ খানিকটা সময় বসে থাকতে হয়।

_123109421_gettyimages-1237814163.jpg
ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিন রাতে ৮ ঘণ্টা করে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একমাত্র রানওয়েটি বন্ধ থাকায় ফ্লাইটে বিলম্বসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরেও বিভিন্ন কারণে ফ্লাইটের বিলম্ব হয়। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছিল। ২০২১ সালে সামগ্রিকভাবে ১৬ শতাংশ মার্কিন ফ্লাইট বিলম্বিত হয়।

বিভিন্ন কারণে ফ্লাইটের বিলম্ব হয়। এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত আছে উড়োজাহাজের জ্বালানী ভরতে দেরি হওয়া, অনেক বেশি যাত্রীদের ব্যবস্থাপনা করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রিতা, বৈমানিকের জন্য অপেক্ষা এবং প্রতিকূল আবহাওয়া।

এই বিলম্বের ব্যবস্থাপনায় একটি কৌশল হতে পরে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরীক্ষা বাড়ানো। এটি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে আরও উপযোগিতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করতে পারে।

_123109428_gettyimages-82098297.jpg
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ইন্টেলঅ্যাক্ট দাবি করেছেন তারা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যেটি এ বিলম্বের সমস্যা সমাধান করতে পারবে। তাদের মতে, বিলম্বের পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী তথাকথিত 'টার্নঅ্যারাউন্ড' সেবা, যার মাঝে অন্তর্ভুক্ত আছে ফ্লাইটের আগে ও পরে উড়োজাহাজ পরিষ্কার করা, পরবর্তী যাত্রার জন্য জ্বালানী, খাদ্য ও পানীয়সহ অন্যান্য উপকরণ রিফিল করা, যাত্রীদের মালামাল সরানো এবং লোড করা।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও উড়োজাহাজ সংস্থার বসানো নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণকারী ক্যামেরা ব্যবহার করে ইন্টেলঅ্যাক্টের এআই সফটওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে টার্নঅ্যারাউন্ড সেবায় যেকোনো ধরনের বিলম্ব চিহ্নিত করতে পারে।

এরপর সফটওয়্যারটি বিমানবন্দরের সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে শিগগির সমস্যাটি তুলে ধরে এবং তাৎক্ষণিক সমাধানও দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি জ্বালানী বহনকারী গাড়ি কোনো কারণে উড়োজাহাজের কাছে যেতে দেরি করে, তাহলে ইনটেলঅ্যাক্ট এ ঘটনা চিহ্নিত করতে পারে এবং 'প্যারালাল বোর্ডিং' এর সুপারিশ করতে পারে। 

প্যারালাল বোর্ডিংয়ের অর্থ হচ্ছে, একইসঙ্গে উড়োজাহাজে যাত্রীরা ওঠবেন এবং জ্বালানীও রিফিল করা হবে। এ ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী একটি দমকল বাহিনীর ট্রাক কাছাকাছি থাকলেই যথেষ্ট। 

ইন্টেলঅ্যাক্টের প্রধান নির্বাহী উদি সেগাল জানান, তিনি ইউরোপের এক বিমানবন্দর সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে এই সফটওয়্যার তৈরির কথা ভাবেন।

ইন্টেলঅ্যাক্ট জানিয়েছে, এ মুহূর্তে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু বিমানবন্দরে তাদের সফটওয়্যারটি যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ইসরায়েলের উড়োজাহাজ সংস্থা এল আল দেশের বেন গারিওন বিমানবন্দরে প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে জানিয়েছে, এ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হলে টার্নঅ্যারাউন্ড সময় ১৫ শতাংশ কমে আসবে।

তবে কর্মীদের ওপর নজর রাখার এ ধরনের প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধানের বিষয়ে কিছু বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো অধ্যাপক স্যান্ড্রা ওয়াখটার জানান, কর্মীরা কতবার বিরতি নিচ্ছেন, কত দ্রুত কাজ করছেন এবং তাদেরকে যন্ত্রের মাধ্যমে দ্রুত কাজ করতে প্রণোদিত করার পুরো প্রক্রিয়াটি অমানবিক এবং এটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। 

সারাক্ষণ এআই-এর নিরীক্ষায় থাকার চাপে ভুল কিংবা দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। এটি উড়োজাহাজের চলাচল নিয়ন্ত্রণের মতো জটিল প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়, জানান স্যান্ড্রা।

তবে অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বিমানবন্দরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছেন।

অনেকেই এখন স্মার্টফোনের অ্যাপের মাধ্যমে বিমানবন্দরের সকল তথ্য দেখছেন, যেমন ফ্লাইট ছাড়ার সময়, কত নম্বর গেটে যেতে হবে এবং কোনো বিলম্ব আছে কী না। স্মার্টফোনে ভ্যাকসিনের ডিজিটাল সনদ সংরক্ষণ, ই-টিকেটের ব্যবহার ও অনলাইন চেকইন এখন খুবই স্বাভাবিক বিষয়।

ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকলেও, আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের সব বিমানবন্দরে বিভিন্ন ধরণের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক সেবা সবার যাত্রাকে আরও সহজ ও সাবলীল করে তুলবে।