কর্ণফুলীর বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়কের জন্য কাটা পড়ল ১৭০০ গাছ
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচে বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ সড়কের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৭০০ গাছ কেটেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
আনোয়ারা উপজেলার চৌমুহনী থেকে শিকলবাহা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে থাকা এসব গাছ কাটা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন সওজের কর্মকর্তারা। তবে বনবিভাগ বলছে, গাছ কাটতে বনবিভাগের অনুমতি লাগলেও তা নেয়নি সওজ। গাছ কাটার বিষয়ে জানেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও।
দেশের প্রথম পানির নিচে এক্সপ্রেসওয়ে টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ শুরু হয় ২০১৯ সালে। সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। টানেলের মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যে এর নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রামের দোহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, ১১ দশমিক ০৫ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৭ কোটি টাকা। টানেল সংযোগ সড়কটি চার লেনের হবে এবং ধীর গতির যান চলাচলের জন্য আরও দুটো লেন হবে।
তবে সংযোগ সড়কের জন্য গাছকাটা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান এ বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না তিনি। এ ব্যাপারে সওজের বৃক্ষ পালন বিভাগ বলতে পারবে বলে পরামর্শ দেন।
যোগাযোগ করা হলে বৃক্ষপালন শাখা কর্মকর্তা, সওজ, চট্টগ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে প্রায় এক হাজার ৭০০ গাছ কেটেছি। আমাদের কমিটির সিদ্ধান্তে নিলামের মাধ্যমে আমরা গাছগুলো কেটেছি।'
গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, 'গাছ কাটার জন্য আমাদের বন বিভাগের অনুমতি লাগে না। তবে আমরা তাদের জানিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'সরকারের উন্নয়নের স্বার্থেই আমরা গাছগুলো কেটেছি।'
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'সওজের যতই বৃক্ষ পালন বিভাগ থাকুক গাছ কাটার জন্য অবশ্যই বন বিভাগের অনুমতি লাগবে। তারা আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।
এতগুলো গাছ কাটার ব্যাপারে বন বিভাগ এতদিন জানত কিনা জানতে চাইলে সফিকুল ইসলাম অবশ্য বলেন, 'এক্ষেত্রে আমার নজরে আসেনি।'
এদিকে, সড়কের দুই পাশের গাছ কাটার ব্যাপারে সওজ কিছুই জানায়নি বলে জানান আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ।
সওজ বৃক্ষপালন শাখা কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সড়কের দুই পাশে কেটে ফেলা গাছগুলোর মধ্যে বড় রেইন ট্রি ছিল প্রায় এক হাজার ৪০০টি।
'এতগুলো গাছ কাটার ফলে সেখানে ইকো সিস্টেম ও জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হবে বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা রুমঝুম ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, গাছগুলোকে বাঁচানো গেলে সেগুলো মাটির ক্ষয়রোধে সহযোগী হতো এবং অক্সিজেনের উৎস হিসেবেও কাজ করতো।